যদি কিছু করার ক্ষমতা থাকে, তা হলে করে দেখাচ্ছেন না কেন? প্রশ্নটি উঠতেই পারে। কারণ, সংসদের উচ্চ কক্ষে দাঁড়িয়ে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খোদ অমিত শাহ বলেছেন–বাংলায় না যাওয়াই ভাল, গেলে খুন হয়ে যেতে পারেন। রাজনৈতিক হতাশা থেকে তিনি এ কথা বলেছেন। বিরোধী দল তথা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। আর সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, পরিস্থিতি এমনটাই হয়ে থাকলে দেশের স্বরাষ্ট্র দফতর হাত গুটিয়ে রয়েছে কেন? কী বলবেন দফতরের মন্ত্রী!
দিন কয়েক আগে বাংলার হিংসা পরিস্থিতির অভিযোগ নিয়ে রাজ্যসভায় মুখ খোলেন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্যসভায় ‘The Criminal Procedure (Identification) Bill 2022’ নিয়ে আলোচনার সময় পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে তিনি তীব্র আক্রমণ শানান। অমিত শাহ দাবি করেন, ‘‘বাংলায় না যাওয়াই ভাল, গেলে খুন হয়ে যেতে পারেন।’’ এ কথা বলে পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী। তাঁর এ হেন মন্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণেদিত বলেও তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি।
কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গে ঘটে গিয়েছে বগটুই-কাণ্ড। ঝালদা ও পানিহাটিতে কাউন্সিলর খুনের ক্ষত এখনও শুকোয়নি। রাজ্যসভায় আমআদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় সিং প্রশ্ন তোলেন, তিনি যখন গুজরাতে যাচ্ছেন, তখন কেন এফআইআর করা হচ্ছে? জবাবে অমিত শাহের দাবি, ‘‘আপনি যদি পশ্চিমবঙ্গে যান, তা হলে তো জীবনই চলে যাবে।’’ ইতিমধ্যে, ওই বিলকে ‘ফ্যাসিস্ট বিল’ বলে উল্লেখ করেছেন বিরোধীরা। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওনারা বলছেন ফ্যাসিস্ট বিল। আমি বেশি কিছু বলব না। ফ্যাসিস্ট শব্দটার ব্যাখ্যাই তো বাংলার সরকার বদলে দিয়েছে।’’ তাই যদি হয়, তা হলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? পশ্চিমবঙ্গে তাঁর দল থেকে কংগ্রেসের তরফে তো প্রকাশ্যেই বলা হয়, রাজ্যে সংবিধানের প্রযোজ্য ধারা প্রয়োগ করার সময় হয়ে গিয়েছে। আর কেন্দ্রীয়মন্ত্রী তো কবুল-ই করছেন–বাংলার সরকার ফ্যাসিস্টের নতুন সংজ্ঞা বের করেছে। তা হলে তিনি হাত গুটিয়ে আছেন কেন? কারণ, শহিদ হওয়ার ভয়!
গত লোকসভা ভোটের সময় বাংলা সফরের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তাঁর দাবি, সেই সময় তাঁর গাড়ির সামনে হামলার চেষ্টা করা হয়েছিল। জে পি নাড্ডার গাড়ির সামনেও হামলা হয়েছিল বলে তাঁর অভিযোগ। তাই অমিত শাহ বলেছেন, ‘‘বাংলায় না যাওয়াই ভালো। গেলে খুন হয়ে যেতে পারেন।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই দাবির জবাব দিতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বাংলার মানুষের থেকে যে ভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, তারপর মানসিক অবসাদ এবং হতাশা থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেছেন। আসলে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন যে, বাংলায় তাঁর দলের রাজনৈতিক ভিত্তি কতটা মজবুত। তাই তো ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন অধরাই রয়েছে। তাই কি কেন্দ্রীয়মন্ত্রী আইনশৃঙ্খলার প্রসঙ্গ তুলে বঙ্গের সরকারকে অন্য বার্তা দিতে চেয়েছেন। আর তার আঁচ পেয়েই কি রাজ্যপালের তলব এড়াতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!