কেউটে নাকি ভগবান!

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি–সংগৃহীত

তিনি ‘কেউটে’, নাকি ‘ভগবান’– উত্তর খুঁজছে আমজনতা। আসলে তিনি ছিলেন বিচারপতি। এখন তিনি পদ্মবনে। চাকরি ছেড়ে বিজেপি’র টিকিটে নিজেই বিচারপ্রার্থী। জনতার আদালতে তিনি হাতজোড় করেছেন। এমন উলটপুরাণ দৃশ্য দেখছে বাংলা।

    রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানা সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটে তমলুক কেন্দ্রে তিনি বিজেপি’র প্রতীক নিয়ে জনতার আদালতে এসে দাঁড়িয়েছেন। ব্রিগেডের ‘জনগর্জন’ সমাবেশ থেকে নাম না করে মমতা বলেন, ‘‘বিচারবিভাগকে সম্মান করি। কিন্তু কেউ কেউ চেয়ারে কেউটে হয়ে বসেছিল। তাদের স্বরূপ এখন প্রকাশ্যে আসছে। এ বার জনতা বিচার করবে।’’

    আগেও বেশ কয়েকজন বিচারপতি অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিষয়টি একটু ভিন্ন। কারণ তাঁর বিচারপতি থাকার মেয়াদ থাকলেও তিনি আগাম অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন এবং বিজেপি দলের প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের-ই মধ্যে রয়েছেন ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তিনি রাজ্যসভার সদস্য হন। তবে সেটা অবসর নেওয়ার পর। সুপ্রিম কোর্টের আর এক প্রাক্তন বিচারপতি এস আবদুল নাজিরকে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল করা হয়েছিল। এটা কি ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক প্রবণতা!‌

    তবে বিচারপতিরাও স্বাধীন দেশের নাগরিক। তাঁদেরও ভোটাধিকার প্রয়োগের এবং স্বাধীন মতদানের স্বাধীনতা আছে। তাই বলে কোনও মামলার রায়ে তার প্রভাব পড়বে, এমন ভাবা সমীচীন হতে পারে না। তবুও বিচারপতি থাকাকালীন যেসব রায় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় দিয়েছেন, তাঁর বিজেপিতে যোগদানের ফলে তা কলুষিত হল কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যদিও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া উচিত হয়নি বলে মনে করেন মেঘালয় হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মানছেন–বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নিষ্ঠা ও সততা নিয়ে তাঁর কোনও সন্দেহ নেই। তাঁর আপত্তি এখানেই যে, যেভাবে ইস্তফা দিয়ে তিনি একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিলেন, সেটা উচিত কাজ হয়নি।

    জনতার একটা বড় অংশের কাছে তিনি অবশ্য ‘ভগবান’। তাই এজলাস চলাকালীন বিচারপ্রার্থীরা ওই বিচারপতির উদ্দেশে হাতজোড় করে বলেন–হুজুর। আপনি ভগবান! নাম না করে বললেও  মমতা অবশ্য তাঁকে ‘কেউটে’ বলেই মনে করেন। তাঁর ‘বিষদাঁত’ কি মমতা ভেঙে দিতে পারবেন? তমলুকের মাটিতে জনতার আদালতে এ নিয়ে চলছে ঘাসফুল বনাম পদ্মফুলের সওয়াল-জবাব। রায় ঘোষণা–৪ জুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here