সময়মতো অফিসে হাজিরা দেওয়া-ই নয়, কাজ ফেলে তাড়াতাড়ি অফিস ছাড়ার প্রবণতা ঠেকাতে এ বার কর্মীদের কড়া হুঁশিয়ারি দিল কেন্দ্র। কিন্তু রাজ্য কেন্দ্রের পথে হাঁটবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আসলে সরকারি অফিস মানেই কাজে ফাঁকি, কর্মীদের এই চিত্র নতুন কিছু নয়। তবে বিগত কয়েক বছরে এই চিত্রটা কিছুটা হলেও বদলেছে। যদিও এখনও বহু সরকারি কর্মী কাজে ফাঁকির পুরনো অভ্যাস বদলাতে পারেননি। এই আবহে এ বার কড়া নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্র। তাতে রাজ্য-প্রশাসনের টনক নড়বে কিনা, তা অবশ্য সময় বলবে। কেন্দ্রীয় নির্দেশে জানানো হয়েছে, কর্মীরা অনেকেই আধার সংযুক্ত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা দিচ্ছেন না। তাই নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে হাজিরার জন্য এ বার থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মোবাইল ফোন নির্ভর ‘ফেস অথেনটিকেশন সিস্টেম’ ব্যবহার করতে হবে। এই ব্যবস্থায় কর্মীর অবস্থান জানা যাবে এবং জিও-ট্যাগিং থাকবে।
কর্মিবর্গ দফতর থেকে জারি করা নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, এ বার থেকে নিয়মিত হাজিরা পোর্টাল থেকে সব তথ্য সংগ্রহ করা হবে। কর্মীরা অফিসে আসতে দেরি করলে তাঁদের অর্ধেক দিনের ক্যাজুয়াল লিভ কেটে নেওয়া হবে। মাসে দু’বার দেরি করে আসার পরে ফের যদি দেরি হয়, তাহলে এই ছুটি কাটা যাবে। তবে বৈধ কারণ দেখালে এক ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বকে ছাড় দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি কর্মীদের তাড়াতাড়ি অফিস ছাড়া নিয়েও কড়া হয়েছে কেন্দ্র। নিয়োগ, ডেপুটেশন, প্রশিক্ষণ, বদলি বা পদোন্নতির জন্য এ বার থেকে এই সব বিষয় বিবেচনা করা হবে বলেও নির্দেশিকায় স্পষ্ট করা হয়েছে।
এমন নির্দেশিকায় নবান্নের ঘুম ভাঙবে কিনা, সেটাই প্রশ্ন! কারণ, ভোট-রাজনীতিতে সরকারি কর্মীদের বড় ভূমিকা থাকে। তাই কর্মীদের মর্জিমাফিক অফিসে আসা-যাওয়া লেগেই আছে। বাড়ির কাজকর্ম সেরে, বউ-বাচ্চার দেখভাল করে অফিসে কোনও একসময়ে হাজিরা দিলেই হল! আবার তড়িঘড়ি অফিস থেকে ফেরার তাড়া। নবান্নের এই ছবি বদলে দিতে মাঝেমধ্যে রাজ্যের মুখমন্ত্রীকে আচমকা বিভিন্ন দফতরে হানা দিতে দেখা গেলেও কর্মীদের একাংশের মর্জিমতো অফিসে আসা-যাওয়ার ছবির কোনও বদল হয়নি। বিশেষ করে যেসব ‘বাবু’রা সরকারি গাড়িতে চেপে অফিস-যাতায়াত করেন, সেই গাড়ির অপব্যবহার হামেশাই চোখে পড়ে। তাই কর্মসংস্কৃতির বদল আনতে কেন্দ্রের পথে রাজ্যসরকার হাঁটবে কিনা, সেটাই এখন দেখার।