স্ট্রোক সম্পর্কে আর কোনও ভুল ধারণা নয়

প্রতীকী ছবি–সংগৃহীত।

স্ট্রোক নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণা অনেকের মধ্যেই রয়েছে। দেখে নেওয়া যাক কী সেই ভ্রান্ত ধারণা, আর সত্যিটাই বা কী? জানাচ্ছেন ডাঃ ইন্দ্রনীল সাহা।  

ডাঃ ইন্দ্রনীল সাহা

স্ট্রোক শুধু বয়স্কদেরই হয় একথা ঠিক, বয়স বাড়লে এই সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। তবে এখন ১৮ থেকে ৬৫–সব বয়সেই স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। ওবিসিটি ও হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যা এখন কম বয়সেই দেখা দেওয়ায় স্ট্রোকের সংখ্যাও বাড়ছে। তবে স্ট্রোক খুব একটা সাধারণ সমস্যা নয়, তা ভুল ধারণা। এখন এই সমস্যা যথেষ্টই বাড়ছে। মৃত্যুহারও উপেক্ষা করার মতো নয়।

স্ট্রোক কোথায় হয়?

মস্তিষ্কে। মস্তিষ্কে থাকা স্নায়ুকোষ যাকে বলে নিউরন সেগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য পুষ্টি, অক্সিজেন দরকার। আর রক্তের মাধ্যমে তা পৌঁছয়। যদি রক্ত জমাট বাধার জন্য বা রক্তনালির কোনও সমস্যার জন্য নিউরনে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, তখন নিউরনগুলো মরে যায়। তখনই হয় স্ট্রোক। যা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এটি ভুল ধারণা। ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রোক স্টাডি থেকে জানা যায়, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ট্রোকের কারণ হল হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস ও ওবিসিটি। এ সব থেকে দূরে থাকলেই স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্ট্রোকের কোনও চিকিৎসা নেই। তা-ও ভুল ধারণা। বেশিরভাগ স্ট্রোক ইস্কিমিক, যা রক্ত জমাট বাধার কারণে হয়। এর চিকিৎসা সম্ভব। স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেওয়ার ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসায় পুরো সুস্থ হওয়া সম্ভব।

স্ট্রোকের সাধারণ লক্ষণ হল ব্যথা

ইস্কিমিক স্ট্রোকের মাত্র শতকরা ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে মাথার যন্ত্রণা থাকে। কাজেই ব্যথা হবেই এমন কোনও কথা নেই। স্ট্রোকের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে কোনও একদিক অসাড় হয়ে যাওয়া, একদিকে দুর্বলতা, ডাবল ভিশন, কী করণীয় বুঝতে না পারা, সমন্বয়ের অভাব এবং কারও কথা বুঝতে অসুবিধা হওয়া। এই সবের যে কোনও উপসর্গ দেখা দিলেই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার।

স্ট্রোক কি বংশগত?

আসলে হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস বা ওবিসিটির সঙ্গে বংশগতির একটা সম্পর্ক আছে। সেই অর্থে স্ট্রোকের সঙ্গে বংশগতির সম্পর্ক আছে। এ ছাড়া কিছু বিরল সমস্যা যেমন কার্ডিয়াক টিউমার, রক্ত জমাট বাধার সমস্যা এবং রক্তনালির অস্বাভাবিকতা, যা স্ট্রোকের জন্য দায়ী। তাও বংশগত হয়।

স্ট্রোকের উপসর্গ দূর হলে কি আর চিকিৎসার দরকার হয় না?

আচমকা স্ট্রোকের অস্থায়ী উপসর্গ দেখা দিলে তাকে বলে ট্রান্সইয়েন্ট ইস্কিমিক অ্যাটাক। এর সঙ্গে স্ট্রোকের তফাৎ হল, ট্রান্সইয়েন্ট ইস্কিমিক অ্যাটাকে রক্তনালি খারাপ হওয়ার আগেই তা ঠিক হয়ে যায়। যদিও অনেক সময়ে ট্রান্সইয়েন্ট ইস্কিমিক অ্যাটাক হওয়ার সাতদিনের মধ্যে স্ট্রোক হওয়ার খুব আশঙ্কা থাকে। কাজেই যে কোনও উপসর্গ দেখলেই

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। আর ধূমপানের অভ্যাস স্ট্রোকের জন্য দায়ী নয়। এমন ধারণাও ভুল। স্ট্রোকের জন্য বিশেষত অল্প বয়সিদের ক্ষেত্রে অনেকাংশেই দায়ী হল ধূমপান। ইস্কিমিক ও হেমারেজিক দু’ধরনের স্ট্রোকই ডেকে আনতে পারে ধূমপানের অভ্যাস।

মনে রাখতে হবে

স্ট্রোক থেকে সুস্থ হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। বেশিরভাগ সময়ে কয়েক মাসে সুস্থ হয়ে উঠলেও কখনও কখনও সুস্থ হতে বছর দুয়েকও লাগতে পারে। তবে শরীরচর্চা ও অন্যান্য থেরাপির সাহায্যে অনেক দিন পর্যন্ত সুস্থ থাকা যায়।

অনুলিখন–শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here