ইনহেলারের ভয় মন থেকে সরিয়ে ফেলুন

শিশুর ইনহেলার ব্যবহার। ছবি–সংগৃহীত।

ইনহেলার সম্পর্কে যাবতীয় ভুল ধারণা দূর করে এর প্রকৃত কাজ সম্পর্কে জানালেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ নন্দিতা সাহা

ডাঃ নন্দিতা সাহা

বহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় সর্দি-কাশিতে জেরবার শিশুরা। সঙ্গে কখনও কখনও বুকে কফ জমে শ্বাসকষ্ট হওয়া। অনেক সময় শিশুকে ইনহেলার দিতে হয়। যদিও ইনহেলার দেওয়া নিয়ে অনেক বাবা-মায়েরই সংশয় থাকে। আর তাতে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা ইন্ধন জোগালে তো কথাই নেই।

    ইনহেলার সাধারণত দু’রকমের হয়। প্রথমত, প্রদাহ কমানোর। অনেক সময়ে এই ওষুধ একটু বেশি দিন ধরে ব্যবহার করতে হয়। আর দ্বিতীয়ত, শ্বাসনলি সঙ্কুচিত হয়ে গেলে তাকে প্রসারিত করার ইনহেলার। এই দ্বিতীয় ধরনের ইনহেলার আচমকা শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য দেওয়া হয়। যদিও কখন রোগীকে কোন ধরনের ইনহেলার দেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকই নিতে পারেন।

“শিশুদের জন্য আদর্শ হল স্পেসার ও মাউথপিস থাকা ইনহেলার”

    এখনও বহু মানুষের ধারণা, শরীরে ইনহেলারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশি। যদিও তা ঠিক নয়। কারণ, কাশি বা শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য যে ট্যাবলেট বা সিরাপ খাওয়ার পরে তা প্রথমে লিভারে যায়, সেখান থেকে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশি থাকে। তার ওপর সেই ওষুধ যদি শ্বাসনলি প্রসারিত করানোর জন্য হয়, তাতে লিভারের ক্ষতি অনেক বেশি হয়। তা ছাড়া এর কাজ করার ক্ষমতা নিয়েও সংশয় আছে। এ কারণেই এখন চিকিৎসকরা রোগীর অবস্থা বুঝে ইনহেলার ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন। কাজেই ইনহেলার শরীরের পক্ষে ভাল কিনা, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ রাখার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

    তবে শ্বাসনলি প্রসারিত করার জন্য ব্যবহৃত ইনহেলারে কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন, মুখ দিয়ে নেওয়া হয় বলে যদি ইনহেলার নেওয়ার পর ভাল করে কুলকুচি না করা হয়, তা হলে ছত্রাকঘটিত সংক্রমণ কিংবা খুব কম ক্ষেত্রে হলেও গলায় সংক্রমণ হতে পারে। যদিও এই সমস্যার তুলনায় অনেক বেশি উপসর্গ দেখা দিতে পারে খাওয়ার ওষুধের থেকে। এ ছাড়াও ইনহেলার ব্যবহার করার কারণে শরীরে পটাসিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে। তাই এই সময় পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন ফল, সম্ভব হলে ডাবের জল বেশি করে খেতে হবে।

“ইনহেলার শরীরের পক্ষে ভাল কিনা, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ রাখার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।”

    শিশুদের জন্য আদর্শ হল স্পেসার ও মাউথপিস থাকা ইনহেলার। এই স্পেসার অনেকটা প্লাস্টিকের বোতলের মতো দেখতে। এতে বেশি ভাল ফল পাওয়া যায়। শুধু শিশুরা নয়, বড়রাও এই ধরনের ইনহেলার ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। কম্প্যাক্ট এবং হালকা বলে যে কোনও জায়গায় তা নিয়ে যাওয়া যায়। ব্যবহারের আগে ইনহেলারের বোতল সোজাসুজি ১০ সেকেন্ড ধরে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে। এরপর মুখে লাগানোর জায়গায় যে ক্যাপ লাগানো থাকে, তা খুলে স্পেসারের পিছনের দিকে লাগিয়ে নিতে হবে। শ্বাস ছেড়ে স্পেসারের মাউথপিস মুখের মধ্যে নিতে হবে। একবার ইনহেলার চাপ দিয়ে মনে মনে দশ গুণতে হবে। একবার নেওয়ার অন্তত ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর দ্বিতীয় পাফ নিতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় মাস্ক দেওয়া স্পেসার ব্যবহার করলে। নাক, মুখ যেন মাস্কের ভিতর থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখয়ে হবে। কোনওরকম ফাঁক থাকা চলবে না। পাফ নেওয়ার পর জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। দাঁত মেজে নিলে আরও ভাল। প্লাস্টিকের বোতল প্রতি সপ্তাহে ঈষদুষ্ণ গরম জল দিয়ে ঝাঁকিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। রাতে ভাল করে শুকিয়ে ফের পরদিন ব্যবহার করা যাবে। স্পেসার এক বছরের পর পাল্টে নতুন কিনতে হবে।

    শিশুকে সুস্থ রাখতে এ সময়ে যা যা করণীয় তা হল:

     সকালে বাইরে টিউশন পড়তে কিংবা স্কুলে যাওয়ার সময় নাক, কান ও মাথা যাতে ঢাকা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা।

     বার বার হাত ধোয়ার অভ্যাস চালু রাখতে হবে।

     প্রচুর জল খাওয়ানো।

     নাক বন্ধ হয়ে এলে বারবার স্যালাইন নাকের ড্রপ দেওয়া।

     নিউমোনিয়া ও ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়া।

      আর সবচেয়ে বড় কথা বাচ্চা অসুস্থ হলে দোকান থেকে বা পুরনো প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ কিনে না খাইয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here