মুখে রাষ্ট্রপতি শাসনের রা কাটলেন না। তবে তিনি জানালেন পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদায় এ বার নিশ্চিত। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ কথা জানান। কিছুদিন আগে তিনি দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি অযৌক্তিক নয়। তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন রাজ্যপাল। সম্প্রতি দিল্লিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও আমলাদের ভূমিকা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে নালিশ করছেন রাজ্যপাল। আর পশ্চিমবঙ্গে এসে বৃহস্পতিবার অমিত শাহ শুনিয়ে গেলেন, মা-মাটি-মানুষের সরকারের বিদায় আসন্ন। কারণ, এই সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী–পাখির চোখ এখন ২১শের রাজ্য বিধানসভার ভোট। সেইমতো ভোটের রণকৌশল ঠিক করতে দু’দিনের বঙ্গ সফর করে গেলেন অমিত শাহ। বঙ্গের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খানিকটা জল মেপে নিলেন, কোন কায়দায় ভোট বৈতরণী পার হবেন। কারণ, তিনি বিলক্ষণ জানেন, মমতাকে বঙ্গ থেকে তুলে ফেলে দেওয়া মুখে যতটা বলা সহজ, কাজে তা করে দেখানো মোটেই সহজ নয়। তাই সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে কি বেঁকাতে হবে? সে ক্ষেত্রে শহিদ হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতেও পারছে না গেরুয়া শিবির। তাই বাংলা দখলের লড়াইয়ে অমিত শাহদের হিসাব করে পা ফেলতে হচ্ছে। একইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের জনগণের কাছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আবেদন, উখাড় কর ফেক দিজিয়ে। অর্থাৎ তৃণমূল সরকারকে সমূলে উৎখাত করুন এবং রাজ্যের সমৃদ্ধি চাইলে বিজেপিকে আনুন। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য, গরিবি হাটানোর জন্য, দেশের সুরক্ষার জন্য বাংলায় বিজেপিকে আসতে দিন। তাঁর দাবি, একমাত্র বিজেপি-ই পারে সোনার বাংলা গড়তে।
কিন্তু বাংলা দখলের লড়াইয়ে গেরুয়া শিবিরের মুখ কে? এ কথা অনস্বীকার্য যে, দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যে পালাবদলের মুখ হয়ে উঠেছিলেন। সেইমতো তিনি রাজ্যপাট চালাচ্ছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে তাঁকে এখন ‘বাংলার গর্ব’ বলে দাবি করা হচ্ছে। বাঁকুড়া আসা-যাওয়ার পথে শাহ কাটআউটে তা দেখেওছেন। আর বাঁকুড়ায় পৌঁছে তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ দেখা যাচ্ছে। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর আস্থা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জনগণের, তাঁরা জানেন শুধুমাত্র মোদীজিই পশ্চিমবঙ্গের সমৃদ্ধি ও গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারবেন।’’ কিন্তু মমতার বিকল্প মুখকে বঙ্গ বিজেপি এখনও পর্যন্ত তুলে ধরতে পারেনি। কাজেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ডাকে বাংলার জনগণ কতটা সাড়া দেবেন, তা সময়ই বলবে। তার আগে শুধু তৃণমূল একা নয়, সিপিএম-কংগ্রেস জোট বেঁধে বিজেপিকে আটকাতে চাইছে। তবুও পশ্চিমবঙ্গে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গঠন করবে বিজেপি। এমনটাই দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। সেইমতো তিনি দলীয় কর্মীদের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন।
লোকসভা নির্বাচনেও দলের কর্মীদেল লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন শাহ। সবাইকে চমকে সেই লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল বিজেপি। ১৮টি আসন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এখন কার্যত বিরোধীর ভূমিকায় তারা। ২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সরকার গঠনের জন্য দরকার হয় ১৪৮টি আসন। লোকসভা ভোটের নিরিখে সেই দৌড়েও প্রায় ছুঁই ছুঁই বিজেপি। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ২০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন শাহ। কারণ পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ী সরকার গড়তে হলে দরকার অন্তত ১৬০টি আসন। ফলে ২০০-র লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারলেও মজবুত সরকার গ়ড়ে ফেলবে বিজেপি। তাই দলীয় নেতা-কর্মীদের মনোবল বাড়াতে তিনি বাঁকুড়া থেকে হুংকার ছেড়েছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে মমতার বিদায় এ বার নিশ্চিত।’’ যা ‘দিবাস্বপ্ন’ বলেই দাবি করেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। আর মমতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম না করে বলেছেন–আমিও হিন্দিতে বলতে পারি যে, উঠাকে ফেক দো। মমতার এই বার্তা শুনে মনে মনে কী ভাবছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? সোজা আঙুলে কি ঘি উঠবে?