ডিজিটাল ডেস্ক, ১০ অগস্ট: কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীজোটের আনা অনাস্থা প্রস্তাব সংসদে ধ্বনিভোটে খারিজ হয়ে গেল। বৃহস্পতিবার লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ১৩৩ মিনিটের ভাষণের পর অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ধ্বনিভোট করেন স্পিকার ওম বিড়লা। ততক্ষণে অবশ্য বিরোধী সাংসদরা ওয়াক-আউট করে গিয়েছেন। মোদী এ দিন তাঁর ভাষণে বলেন, ‘‘আমি আমার বিরোধীদের বলতে চাই আপনারা কেন একটু তৈরি হয়ে এলেন না? কী হাল আপনাদের? মোদী মনে করিয়ে দেন ২০১৮ সালে বিরোধীরা অনাস্থা আনার পর ২০১৯ সালে এনডিএ বড় অঙ্ক নিয়ে শাসকের গদিতে ফেরে। মোদীর দাবি–মণিপুরে নিশ্চয়ই শান্তির সূর্য উঠবে। মণিপুর আবার নতুন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাবে।
মণিপুর ইস্যুতে আলোচনার তিনদিনে একবারও সংসদে উপস্থিত ছিলেন না নরেন্দ্র মোদী। যদিও তাঁকে সংসদে টেনে আনা এবং বক্তব্য রাখতে বাধ্য করাই এই অনাস্থা প্রস্তাবের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জয় বলে দাবি করেন বিরোধী দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরি। অবশ্য অসংসদীয় আচরণের অভিযোগে বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীরকে লোকসভা থেকে সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করেছেন স্পিকার। সূত্রের খবর, এ নিয়ে প্রিভিলেজ কমিটির সিদ্ধান্ত না হওয়া অবধি সাসপেন্ডই থাকবেন অধীর।
মোদী এ দিন জবাবি ভাষণে বলেন, ‘‘উত্তর-পূর্ব ভারত আমার কাছে হৃদয়ের টুকরোর মতো দামি। তবে আজ উত্তর-পূর্ব ভারতে যে সমস্যা চলছে, তার জন্ম দিয়েছিল কংগ্রেস। ভুললে চলবে না। যখন মণিপুরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের মূর্তিতে বোমা ফেলা হয়েছিল, তখন কংগ্রেস ছিল মণিপুরের সরকার চালানোর দায়িত্বে। মণিপুরে বহুদিন কংগ্রেসের সরকার ছিল। কিন্তু সেই সময়ও বার বার মণিপুরে বোমাবাজি হয়েছে। কিন্তু আমরা গত ছ’বছরে মণিপুরে যে সরকার চালাচ্ছি, সেই সরকার এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমার সরকার মণিপুরে উন্নতির চেষ্টা করে চলেছে। তবে আমরা এটা ভোটের জন্য করছি না। আমাদের সময়েই প্রথম মণিপুরে বন্দে ভারতের মতো ট্রেন চলেছে। এইমস খুলেছে, পণ্যবাহী ট্রেন পৌঁছেছে। প্রথম মণিপুর থেকে সাংসদ এসেছে। প্রথমবার মণিপুর থেকে বিশিষ্টকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। আমাদের সবকা সাথ সব কা বিকাশ স্লোগান শুধুমাত্র স্লোগান নয়। আমরা দেশের কাজ করতে বেরিয়েছি।’’ মণিপুরের মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রীর আবেদন–দেশ আপনাদের সঙ্গে আছে। সংসদ সঙ্গে আছে। ওখানে সমস্যার সমাধান হবে। আমি মণিপুরের মা-বোনেদের বলছি। কিন্তু শুনে খারাপ লাগছে, এই সংসদ থেকেই কেউ কেউ ভারতমাতার মৃত্যু কামনা করছেন। নাম না করেই রাহুল গান্ধীর মন্তব্য টেনে মোদীর আক্রমণ–ওই মন্তব্যে ভারতবাসী দুঃখ পেয়েছে। কিন্তু দেড় ঘণ্টার বক্তৃতাতে মণিপুর নিয়ে জবাব দেননি মোদী। প্রতিবাদে বিরোধীরা অধিবেশন ছেড়ে বেরিয়ে যান। মোদী দেখে বলেন, ‘‘এঁরা অভিযোগ করতে পারেন, অথচ এঁদের জবাব শোনার ধৈর্য নেই। এঁরা এখন পালিয়ে যাচ্ছেন!’’ এ দিন জবাবি ভাষণে মোদীর আরও দাবি–ওঁরা বলেছেন, ওঁরা প্রেমের দোকান, আর আমরা ঘৃণার দোকান। কিন্তু ভারতের মানুষ বলছে, ওরা লুটের দোকান। ওরা ভারতের দেউলিয়া হওয়ার গ্যারান্টি। জেনে রাখুন ওদের দোকানে খুব তাড়াতাড়ি তালা পড়বে। কিন্তু আমার গ্যারান্টি–আমার শাসনকালে দেশকে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে নিয়ে আসব। পাশাপাশি মোদী অনাস্থার পক্ষে ভাষণে রাহুল গান্ধী দাবি করেছিলেন যে, রাবণের মতো অহঙ্কার মোদীর। ওই অহঙ্কারই ওঁকে ডোবাবে। ওই মন্তব্যের জের টেনেই এ দিন সংসদে কংগ্রেসকে তোপ দাগেন মোদী। বলেন–ঠিকই বলা হয়েছে, লঙ্কাকে রাবণের অহঙ্কারই ডুবিয়েছিল। যেমন কংগ্রেসকে ওঁদের অহঙ্কার ডুবিয়েছে। রামরূপী জনতা ওঁদের ৪০০ থেকে ৪০-এ নামিয়ে এনেছে। আর বিরোধী জোটের নাম নিয়ে মোদীর কটাক্ষ–এই জোটের নাম ইন্ডিয়া নয় ঘমন্ডিয়া (অহংকারি) হওয়া উচিত ছিল।