ডিজিটাল ডেস্ক, ২১ জুলাই: ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোট পশ্চিম বঙ্গে ‘শাসক’ তৃণমূলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই ভোটে দলকে দীর্ঘ ১৫ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার যে মোকাবিলা করতে হবে, রবিবার ধর্মতলায় ২১শের সমাবেশ থেকে ঠারে ঠারে সেই বার্তা-ই দিলেন তৃণমূল-সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ বারের লোকসভা ভোটের ফলাফল দলের কর্মীদের মধ্যে যাতে ‘আত্মতুষ্টি’ না ডেকে আনে, সে বিষয়ে সজাগ তৃণমূলনেত্রী। তাই রবিবার বক্তৃতায় মমতা সরাসরি বলেছেন, ‘‘বিত্তবানদের নয়, বিবেকবানদের দল হতে হবে তৃণমূলকে। আমি দলে বিত্তবান লোক চাই না। বিবেকবান লোক চাই। কেন জানেন? পয়সা আসে, চলে যায়। কিন্তু সেবার কোনও বিকল্প নেই।’’ অর্থাৎ, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের এক শ্রেণির নেতার যে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ব্যয়ের নিদর্শন দেখা যাচ্ছে, মমতা সে দিকে আঙুল তুলেছেন। মমতা বলেছেন, ‘‘যত জিতব, তত নম্র হতে হবে।’’ অর্থাৎ, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় শাসক দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে যে ‘দাদাগিরি’র প্রবণতা দেখা দিয়েছে, নেত্রী মমতা তার দিকে নজর দিতে বলেছেন।
নেতা-কর্মীদের শাসন করার ভঙ্গিতে মমতা বলেছেন, ‘‘যেন কারও বিরুদ্ধে দল কোনও অভিযোগ না পায়! অভিযোগ পেলে দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’ সেই কথার জের টেনেই ‘সৎ’ থাকার পরামর্শও দিয়েছেন। বলেছেন– আমি চাই আপনারা গরিব থাকুন। তার মানে ঘরে যা আছে, সেটা খেয়ে বেঁচে থাকুন। লোভ করার দরকার নেই। এ সব শুনে বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলার জন্য এ সব বলছেন। কিন্তু ওঁদের দলের যা ব্যবস্থা, তাতে আদৌ সেটা সম্ভব কি? তোলাবাজি বন্ধ হয়ে গেলে দলের টাকা জোগাবে কে?’’ আর বৃষ্টিভেজা সমাবেশ থেকে এ দিন মমতা বলেন, ‘‘বৃষ্টি গায়ে লাগল তো? এ তো স্নান করলে ধুয়ে যাবে, কিন্তু নোংরা গায়ে লাগলে সেটা ধোয়া যায় না। কেউ যেন আপনাকে লোভী বানাতে না পারে। আমাদের শপথ নিতে হবে, দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপস নয়। যাঁরা নির্বাচিত হয়ে মানুষের সেবা করবেন না, তাঁদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখব না।’ সমাবেশ থেকে তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, ‘‘তথাকথিত টেট দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হলে কেন নিট দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান গ্রেফতার হবেন না?’’
এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র প্রধান অখিলেশ যাদব। তার পর সেখান থেকে তিনি সোজা চলে যান কালীঘাটে মমতার বাড়িতে। সেখান থেকেই দু’জন একসঙ্গে ধর্মতলায় সমাবেশে আসেন। অখিলেশ বলেন, ‘‘দিল্লিতে যাঁরা ক্ষমতায় রয়েছেন, তাঁরা লাভের জন্যই সব করেন। ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেন। বাংলায় বিজেপিকে আপনারা হারিয়ে দিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের মানুষও তা-ই করেছে। এঁরা আসলে দিল্লিতে কিছু দিনের অতিথি। দিল্লিতে সরকারের পতন হবে। দেখব আমরা। আমাদের খুশির দিন আসবে।’’