ডিজিটাল ডেস্ক, ১ অক্টোবর: একটি মেয়ে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে। হাতে স্টেথোস্কোপ। আর জি করের ঘটনায় এমন-ই এক নারীমূর্তিকে ঘিরে রেখেছে দশভূজা। এ বারের উৎসবে এই ছবিকে সামনে রেখে একাধিক দেশের প্রবাসী বাঙালিরা প্রতিবাদের ‘সেতু’ বন্ধনে ব্রতী হয়েছেন। পাশাপাশি বঙ্গে পুজোর উৎসবে আর জি করের ছায়া যাতে না ঘনায় তা নিয়ে সাবধানী রাজ্য-প্রশাসন। আন্দোলনে থাকা জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান–উৎসবে ফিরুন।
এই আহ্বানের কোনও দরকার ছিল কী!। আসলে বাঙালি উৎসবে ফিরবে-ই। তাই পিতৃপক্ষের অবসানের আগেই কলকাতা থেকে জেলা– উৎসবে মাতোয়ারা বাঙালি। বানভাসি কয়েকটি জেলায় অবশ্য এই উৎসবের আমেজ ফিকে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কলকাতার ছবিটা অন্যরকম। পুজোর কেনাকাটা থেকে উৎসবের সূচনায় মঙ্গলবার সকাল থেকে যতই বেলা গড়িয়েছে যানজটে নাজেহাল হয়েছেন পথচারীরা। ট্রাফিক পুলিশকে যানজট মোকাবিলায় হিমসিম খেতে হয়েছে। এর মধ্যে ফের অভয়ার বিচারের দাবিতে মিছিল গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে ওঠে।
আর জি কর-কাণ্ডে টানা অচলাবস্থা চলার পর গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আংশিকভাবে কাজে ফিরেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এ ভাবে দিন দশেক চলার পর ফের তাঁরা ১০ দফা দাবি নিয়ে পূর্ণ কর্মবিরতির পথে নেমেছেন। আর জি কর-আন্দোলনে প্রথম থেকেই তাঁরা সাধারণ মানুষকে পাশে পেয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগ দিয়েছেন সাধারণ নাগরিক। কিন্তু সাগর দত্ত হাসপাতালে এক রোগিণীর মৃত্যুতে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগে ওই রোগিণীর আত্মীয়-পরিজনদের হাতে কর্তব্যরত ডাক্তার এবং নার্সরা নিগৃহীত হয়েছেন। ঘটনায় ফের ফুঁসে উঠেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে তাঁদের তরফে জানানো হয়, তাঁরা প্রয়োজনীয় পরিষেবা দিচ্ছেন। সেই দাবির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফের রাজ্যের ২৩টি মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের মিলিত মঞ্চের পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক। যা নিয়ে অনেকের-ই প্রশ্ন বিকল্প কোনও পথে কি আন্দোলন জিইয়ে রাখা যায় না?
আন্দোলনকারীদের মনোবল বজায় রাখার জন্য পিছনে তাকানোর কোনও জায়গা নেই বলেই মত জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের। যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার আগেই তাঁরা কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তবে ভবিষ্যতে তা চিন্তার কারণ হতে পারে। মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ফিরতে পারে ‘থ্রেট কালচার’। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যভবন একটি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়ে তুলেছে। সেটা ‘থ্রেট কালচার’ তদন্ত করার জন্য। আর নবান্নের এই তদন্ত কমিটি গড়ে তোলার মধ্যে রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে। ফলে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে জুনিয়র ডাক্তারদের এ বারের কর্মবিরতি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আগেই তাঁদের বলেছিলেন উৎসবে ফিরুন। রাত পোহালেই মহালয়া। তার আগেই মঙ্গলবার উৎসবের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি কলকাতা থেকে জেলা— অন্য এক দেবীপক্ষের সূচনা করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ঘরে বসে নয়, বরং পথে নেমে দেবীপক্ষের সূচনা দেখতে চাইছেন তাঁরা। তাঁদের নতুন স্লোগান–অভয়াশক্তি বলদায়িনী।