জামশেদপুরের রিচা কর ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে এমবিএ’তে ভর্তি হন। কোর্স শেষ হওয়ার পর আটবছর চাকরি করার সময়েই ব্র্যান্ড ও রিটেল নিয়ে সমীক্ষা করেন। সমীক্ষা করার সময়ে তিনি লক্ষ করেন, মেয়েরা বিশেষত গ্রামের মেয়েরা পুরুষ দোকানদারদের থেকে অন্তর্বাস কেনার ব্যাপারে খুবই অস্বস্তি বোধ করে। অনেকের নিজের মাপ সম্পর্কেও ধারণা থাকে না। তখনই তাঁর মাথায় নতুন এক আইডিয়া আসে। ভাবেন, অনলাইনে যদি বিক্রি করা যায় তা হলে এই অস্বস্তি থেকে মেয়েরা মুক্তি পাবে। যদিও এ বিষয় নিয়ে তাঁর মায়ের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তিনি পরিষ্কারভাবে তাঁর আপত্তির কথা জানান। তিনি বলেন– মেয়ে কী করে, জিজ্ঞাসা করলে আমি বলতে পারব না, সে কম্পিউটারে অন্তর্বাস বিক্রি করে। মেয়ের কাজ সমর্থন করতে পারেননি তাঁর বাবাও।
যদিও রিচা নিজের লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছিলেন। কাজ শুরু করার আগে বিভিন্ন শপিং মল, বড় বড় দোকানে নিজে গিয়ে সমীক্ষা করেছেন। তারপর কোনও কিছু না ভেবে ২০১১ সালে জিভামি নামে সংস্থা তৈরি করে কাজ শুরু করেন। হিব্রুতে ‘জিভা’ শব্দের অর্থ রেডিয়্যান্স। কিন্তু সেই নাম কোনও কারণে দিতে পারেননি। তারপর জিভা নামের সঙ্গে ‘মি’ শব্দ যোগ করে সংস্থার নাম দেন ‘জিভামি’। নিজের সমস্ত সঞ্চিত অর্থ এবং পরিবার ও বন্ধুর থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা ধার করে এই ব্যবসায়ে নামেন। প্রথমদিকে নানাভাবে সমালোচিত হন। অনেকেই তাঁর এই ব্যবসা মেনে নিতে পারেননি। সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ব্যবসার জন্য বাড়ি ভাড়া পেতেও সমস্যা হয়েছে। যদিও তিনি কখনও হাল ছাড়েননি। কাজের প্রতি নিষ্ঠা, একাগ্রতা তাঁর সংস্থাকে দাঁড় করাতে সাহায্য করেছে। মাত্র চার বছরে তাঁর কোম্পানির মুনাফা হয় ২৭০ কোটি টাকা। অনলাইনে বিক্রি মানে যে শুধু নামী শহরের মহিলারাই কেনেন, তা কিন্তু নয়। তাঁর সংস্থার প্রায় ৩০ শতাংশ বিক্রি হয় ছোট ও মাঝারি শহর থেকে। আর আজ দেশের মহিলা উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে তাঁর স্থান। ব্যবসা ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যেতে চান। তাঁর সঙ্গে আছে অজস্র মহিলার শুভেচ্ছা।
আসলে যদি নিজে কিছু করার মতো দৃঢ় মনোযোগ থাকে এবং সেই কাজ করার জন্য যথেষ্ট উৎসাহ থাকে, তা হলে সাফল্য আসবেই। এই চিন্তাভাবনাকেই জীবনের মূলমন্ত্র করে এগিয়েছেন রিচা কর। তাই তিনি আজ একজন সফল উদ্যোগপতি।