ডিজিটাল ডেস্ক, ১১ ফেব্রুয়ারি: তাঁরা কলকাতা পুরনিগমের ১০৫ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত ৩এ, সাফুইপাড়া বৈদ্যপাড়া রোড, গায়ত্রী অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা। তাঁরা এই অ্যাপার্টমেন্টের-ই একটি ফ্লাটের দুই মহিলার পোষ্য প্রতিপালনে গাফিলতি এবং উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। নিগমের মহানাগরিকের কাছে তাঁদের করুণ আর্তি–আমরা বিপন্ন, দয়া করে আমাদের বাঁচান।
অভিযোগ, ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গায়ত্রী অ্যাপার্টমেন্টের তিনতলায় ফ্ল্যাটটি কেনার পর ওই দুই মহিলা পোষা বিড়াল এবং কুকুরের সঙ্গে সেখানে বসবাস করেন। কিন্তু পোষ্যদের মলমূত্র নিয়মিতভাবে নিষ্কাশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পর্যাপ্ত মনোযোগ দিতে আগ্রহী নন। এই অভিযোগ অবশ্য তাঁরা মানতে নারাজ। কিন্তু ওই অ্যাপার্টমেন্টের অন্যান্য বাসিন্দারা নিগমের মহানাগরিকের কাছে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, কমপক্ষে ১৭টি বিড়াল রয়েছে ওই দুই মহিলার ফ্ল্যাটে। সেইসব বিড়ালের বর্জ্য থেকে দুর্গন্ধে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি মৃত বিড়ালছানা এবং পোষা প্রাণীর মলমূত্র পলিথিনের বা কাপড়ের ব্যাগে ভরে শৌচাগারের পাইপ দিয়ে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। তাতে নর্দমা দিয়ে বর্জ্য নিষ্কাশন বাধা পাওয়ায় অ্যাপার্টমেন্টের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে গড়ফা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তাতে পুলিশের তরফে কী পদক্ষেপ করা হয়, তা সময়-ই বলবে।
অভিযুক্তদের মধ্যে একজন স্বীকার করেছেন যে, দুটি পোষা কুকুরকে তাঁরা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কাঁচরাপাড়ায় বাপের বাড়িতে রেখে এসেছেন। তাতে সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি বলে অ্যাপার্টমেন্টের অন্যান্য বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাঁদের মধ্যে পরিমল নাহা জানান, পোয্যপালিকাদের মধ্যে আরেকজন স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তাঁদের ফ্ল্যাটে ১৭টি বিড়াল আছে। সেইসঙ্গে তিনি দাবি করেন– এটি বিড়ালের বাড়ি। আইনের চোখে এই ধরনের দাবি মান্যতা পায় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এমন পরিস্থিতিতে, দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে কখনও কখনও পোষ্যপালিতারা তাঁদের ফ্ল্যাটের সদর দরজার বাইরে কর্পূরের মতো কিছু ছড়িয়ে দেন। এতে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না; বরং, তাঁদের পোষা প্রাণীদের বর্জ্যের কটূ গন্ধ, চিৎকার আর কান্না অন্যান্য বাসিন্দাদের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তাতে বয়স্কদের সঙ্গে শিশুরা মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এইসব ঘটনা পোষ্যপালিতাদের জানিয়েও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বলে অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাঁরা জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি অ্যাপার্টমেন্টের নর্দমা পরিষ্কার করার সময় কমপক্ষে ৪০ কেজি পলিথিনের এবং কাপড়ের ব্যাগ ভরতি বর্জ্যের সঙ্গে বেশ কয়েকটি মৃত বিড়ালছানা উদ্ধার হয়েছে। অসহনীয় এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে রাখা হয়েছে। তাই তাঁরা অ্যাপার্টমেন্টের স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার পরিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য নিগমের মহানাগরিকের সদয় হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। কারণ কেউ একটি আবাসিক ফ্ল্যাটকে বিড়ালের খামারে পরিণত করতে পারে না এবং পুরনিয়ম লঙ্ঘন করে অন্য কোনও প্রাণী প্রতিপালন করে কেউ অন্যদের স্বাভাবিক জীবনকে কঠিন ও বিপজ্জনক করে তুলতে পারে না। তাই বিপন্ন ওই অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দাদের করুণ আর্তি– মহানাগরিক অবশ্যই তাঁদের কষ্ট বুঝতে পারবেন এবং তাঁদের জীবন বাঁচাতে পুরআইন বা প্রবিধানের প্রাসঙ্গিক ধারা অনুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন।