পাহারায় পাবলিক

সংগৃহীত কোলাজ।

দিদির স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে। দিদি মানেই তৃণমূল কংগ্রেস। সেই দলের সঙ্গে দুর্নীতিকে একই বন্ধনীতে আনতে চায় সিপিআইএম। সেই লক্ষে ‘পাহারায় পাবলিক’ কর্মসূচি নিয়ে শাসকদলের নেতা-নেত্রীদের একাংশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে লালপার্টি। উদ্দেশ্য একেবারে নিচুতলার দুর্নীতিকে সামনে তুলে ধরে শাসকদলকে বেকায়দায় ফেলা। তাই আগামী পঞ্চায়েত ভোটকে পাখির চোখ করে রাজ্যবাসীর দুয়ারে এখন পাহারায় পাবলিক। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় এসে একুশের শহিদ সমাবেশ থেকে আগেই নিজেকে রাজ্যবাসীর ‘পাহারাদার’ বলে দাবি করেছেন। এখন ভোট বৈতরণি পার হতে সিপিআইএম পাহারাদারের কর্মসূচি নিয়েছে। তা কি শাসকদলের অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে? এ কারণেই কি ভাইপোর হুঁশিয়ারি ঠিকাদারি করলে দল করা যাবে না! ইতিমধ্যে, শাসকদলের কোন নেতার বিরুদ্ধে কী কী দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, সেই তালিকা প্রকাশ করার জন্য সিপিআইএমের তরফে রাজ্যবাসীর কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। প্রথম দফায় সেই তথ্যই প্রকাশ করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে পরিচয়-সহ সেই সব নেতাদের সামনে আনা হয়েছে। এর পরে আরও কয়েক দফায় এই তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে দলীয় সূত্রের খবর।

    পাহারায় পাবলিক কর্মসূচিতে জড়িত এক নেতার কথায়, ‘‘আমরা মানুষের কাছে শাসকদলের নেতাদের দুর্নীতির কোনও অভিযোগ আছে কিনা জানতে চেয়েছিলাম। সেখানেই দেখা যায় চুনোপুঁটি থেকে রাঘববোয়ালদের সব নাম আসছে। সেই সব অভিযোগ স্থানীয় সংগঠনকে দিয়ে খোঁজখবর করে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কেউ চাইলে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে।’’ শাসকদলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে এ ভাবেই আন্দোলনে নেমেছে লালপার্টি। সারদা, নারদা-সহ বেশ কিছু মামলায় সিপিআইএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তৃণমূলের সঙ্গে দুর্নীতির যোগ নিয়ে বিধানসভাতেও সুর চড়িয়েছিলেন সিপিআইএম তথা বামেরা। তা হলে এটা নতুন কী? দলীয় সূত্রের খবর, এতদিন পর্যন্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ এনে আন্দোলন করা হত। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে সেই কৌশল বদল করা হয়েছে। এ বার লক্ষ্য শুধু শীর্ষ নেতৃত্বই নয়, শাসকদল যে আপাদমস্তক দুর্নীতিতে যুক্ত, তা সামনে আনা। যাতে গ্রাম থেকে পাড়ায়, এর প্রভাব পড়ে। সিপিআইএম দলের এক নেতার কথায়, ‘‘রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি। কাঠগড়ায় মন্ত্রী। হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে খোদ মন্ত্রীকন্যার। গরু পাচার-কাণ্ডে সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দিতে হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলকে। সিবিআই, ইডি রাজ্যের নেতাদের নিয়ে টানাটানি করছে, সেটা মানুষ জানে। কিন্তু নিচুতলায় যাঁরা পুকুর চুরি করছেন, কাটমানি খাচ্ছেন, তোলা তুলছেন, শাসকদলের ছত্রছায়ায় এসে আচমকাই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। আচমকাই গ্রামের কুঁড়ে ঘরের সামনে গজিয়ে উঠেছে অট্টালিকা। কীভাবে হল, মানুষকে তা জানাতে হবে। প্রমাণ হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের পুরো দলটাই একই রকম।’’ মানতে নারাজ শাসকদলের নেতামন্ত্রীরা। তাঁদের পালটা দাবি, ৩৪ বছর বামজমানায় যাঁরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন, এমন দৃষ্টান্ত ভুরি ভুরি। পার্টির হোলটাইমারদের পরিবারের সদস্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে মেধাতালিকায় নাম থাকা চাকরিপ্রার্থীদের বঞ্চনা রাজ্যবাসীরা ভুলে যাননি। জেলায় জেলায় সিপিআইএম দলের প্রাসাদপম পার্টি অফিস তৈরি করার ইতিহাসও রাজ্যবাসীর মনে আছে। কাজেই ‘দুর্নীতি’ নিয়ে যতই চাপান-উতোর থাকুক না কেন, একসময়ে যাঁরা কৌটো ঝাঁকিয়ে দলের তহবিল গড়েছেন, সেইদলের এখনকার নেতা-কর্মীদের জীবনযাত্রা কিন্তু অন্যকথা বলে। রাজ্যবাসী তা-ও দেখছেন। এ কারণেই তো বদল দেখতে চেয়েছিলেন বঙ্গবাসী। তা হলে পালাবদলের পরও শাসকদল কাঠগড়ায় কেন? উত্তর–রাজনীতি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here