পদ্মার বুকে স্বপ্নের দ্বিতল সেতু, বাংলাদেশের মুকুটে নয়া পালক

পদ্মায় স্বপ্নের সেতু। ছবি–সংগৃহীত।

ডিজিটাল ডেস্ক, ২৫ জুন : খরস্রোতা পদ্মার বুকে দ্বিতল সেতু। আজ, শনিবার বাংলাদেশ সরকারের মকুটে জুড়ে গেল নতুন পালক। কারণ, নদীর উপর যে সেতু গড়ার স্বপ্ন গত দশ বছর ধরে দেখে আসছে বাংলাদেশ, সেই স্বপ্ন এ বার পূরণ হল। সেতুর নাম ‘পদ্মা ব্রিজ’ বা ‘পদ্মা সেতু’। আজ-ই দশ কিমি দীর্ঘ সেতুটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে যাবে। সে জন্য তৈরি বাংলাদেশ। সেতুটি পুরোদমে চালু হলে রেলপথে কলকাতা থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগবে মেরেকেট ৬ কিংবা সাড়ে ৬ ঘণ্টা।

সূত্রের খবর, এই সেতুর নকশায় বেশ কিছু বিরল বিশেষত্ব রয়েছে। যা গোটা দুনিয়ার কাছেও বাংলাদেশকে শ্রেষ্ঠত্বের খ্যাতি এনে দিতে চলেছে। যেহেতু সেতুটির একতলায় অর্থাৎ নদীর কাছাকাছি চলবে ট্রেন। তার সামান্য উপরে চার লেনের চওড়া রাস্তায় চলবে সব রকম গাড়ি। প্রায় ১০ হাজার কোটি বাংলাদেশি মুদ্রার ব্যয়বহর সামলে তৈরি করা এই পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জাতীয় উৎপাদনকে (জিডিপি) এক ধাক্কায় ১.২ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারবে বলে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

সেতুটির রেল লাইন ধরে ঢাকা পৌঁছতে হলে কলকাতা থেকে বনগাঁ জংশন হয়ে হরিদাসপুর সীমান্ত দিয়ে বেনিয়াপোল, যশোর, নড়াইল, ফরিদপুরের ভাঙা হয়ে শুধু ২৫১ কিমি পথ যেতে হবে। ২০১০ সাল থেকে সেতুটির পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ সরকার। প্রথমে এই সেতুর জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্কের অর্থ সাহায্য করার কথা ছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিশ্ব ব্যাঙ্ক বেঁকে বসে। কারণ, সেতু নিয়ে বাংলাদেশে বড় দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। নাম জড়ায় বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের। দুর্নীতির কারণ দেখিয়েই বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়ে দেয় যে, তারা এই প্রকল্প রূপায়নের কাজ থেকে সরে আসতে চায়। তাতে বাংলাদেশ সরকারের মাথায় হাত পড়ে । শেষে বাংলাদেশ সরকারই দায়িত্ব নিয়ে আসরে নামে। সেতু তৈরির টেন্ডার ডাকা হয়। আগ্রহ দেখায় একাধিক চিনা সংস্থা। তাদের মধ্যেই একটিকে পছন্দ করে বাংলাদেশ। গত প্রায় আট বছর ধরে তারাই তিলে তিলে তৈরি করেছে পদ্মা সেতুকে। এখন কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস কলকাতা স্টেশন থেকে নদিয়ার গেদে পেরিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত স্টেশন দর্শনা পার করে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছয় ১০ ঘণ্টায়। ৪০০ কিমির রাস্তা পাড়ি দেওয়ার সেইসময় এ বার কমতে চলেছে। শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘কারও বিরুদ্ধে আমার কোনও অনুযোগ নেই। আমরা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেশবাসীকে নিয়ে সব সমস্যা মোকাবিলা করে যাচ্ছি।’’ হাসিনা এর পর সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা থেকে দুটি লাইন শোনান, ‘‘জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়। আমরা মাথা নোয়াইনি, আমরা মাথা নোয়াব না। জাতির পিতা আমাদের মাথা নোয়াতে শেখাননি।’’

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here