ফের দলবদল, ঘরওয়াপসি। এ বার পদ্ম ছেড়ে জোড়াফুলে নাম লেখালেন অর্জুন সিংহ। কেন? তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানা চর্চা। কেউ বলছেন যে, তৃণমূলের প্রবল চাপের মুখে নতি স্বীকার করলেন বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ। তার স্পষ্ট জবাব তিনি সংবাদমাধ্যমকে দেননি। ঘরওয়াপসির কারণ প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, বিজেপি দলে থেকে তাঁর সমস্যা হচ্ছিল। তিনি ঠান্ডা ঘরে বসে ফেসবুক রাজনীতি চান না। তিনি মাঠে-ময়দানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই চেয়েছিলেন। প্রশ্নটা এখানেই, লড়াই তো তিনি করছিলেন। তাই তো তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার পাহাড় জমেছে। আর এ কারণেই কি তিনি হাঁফিয়ে উঠেছিলেন, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়াতেই কি তাঁর ভোলবদল! অর্জুনের সাফাই, ‘‘ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছি। ভুল বোঝাবুঝিতে দল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলাম।’’
চটকল শ্রমিকদের ইউনিয়ন করে রাজনীতিতে অর্জুনের হাতেখড়ি। তারপর হাত প্রতীক নিয়ে কাউন্সিলর। সেই সময় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান। ঘাসফুল প্রতীকের বিধায়ক হিসাবে বিধানসভায় পদার্পণ। সেখান থেকে সোজা লোকসভায়। তবে ঘাসফুলের হয়ে নয়, পদ্ম প্রতীকে দিল্লি যাত্রা হয় অর্জুনের। ঠিক তিন বছরের মাথায় আরও একবার দল বদল করলেন বারাকপুরের এই সাংসদ। ফিরলেন পুরনো দল তৃণমূলে।
বিজেপি সাংসদ অর্জুনের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় একাধিক মামলা রয়েছে। এর বেশিরভাগই তাঁর বিজেপিতে যোগদানের প্রথম দু’মাসের মধ্যে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের গণনার আগে বারাকপুর পুলিশ অর্জুনকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করেছিল। অর্জুন সিংহ এরপর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন এবং আদালত তাঁকে স্বস্তি দেয়। তাঁর বাড়িতেও বোমা-হামলা হয়েছিল এবং তাঁর গাড়িটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অভিযোগের তির রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের দিকে। এমনকী অর্জুন-পুত্র পবন সিংহকেও হামলার শিকার হতে হয়েছিল বলে অভিযোগ। বিজেপির দাবি, নির্বাচনের পরেও অর্জুনের বিরুদ্ধে হিংসা অব্যাহত ছিল। তাঁর বাসভবনে সাত রাউন্ড গুলি চালিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল। এ ছাড়া তাঁর অফিসের কাছেও দুটি বোমা মারা হয়েছিল। এমনকী
ভাটপাড়া পুরসভার কর্তৃত্ব তাঁকে হারাতে হয়।
উল্লেখ্য, একুশের বিধানসভা ভোটে ভাটপাড়ায় তাঁর ছেলে পবন সিংহ জিতলেও গোটা বাংলায় বিজেপির ধরাশায়ী অবস্থা হয়। ভোটের পর পরই তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া একাধিক নেতারই ঘরওয়াপসি ঘটে। দলের বঙ্গ শাখার থেকে মুখ ফেরান কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। একেরপর এক বিধানসভা ও লোকসভা উপ-নির্বাচনেও গেরুয়া প্রার্থীরা ধরাশায়ী হন। পুরসভা ভোটেও ঘটে বিপর্যয়। এরই মধ্যে চটের দাম নিয়ে অর্জুন সিংহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন। বড় আন্দোলনের হুমকিও দেন। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হতে থাকে। অবস্থা বেগতিক বুঝে অর্জুনকে দিল্লিতে ডেকে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে বিজেপির নেতৃত্ব। মেনে নেওয়া হয় অর্জুনের দাবি। প্রত্যাহার করা হয় বর্ধিত দাম। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না। ফের দলবদল করে তৃণমূলে নাম লেখালেন অর্জুন সিং। তা হলে কি মনস্থির করেই ফেলেছিলেন যে, ফুলবদল করবেন-ই!