পুজো দোরগোড়ায়। প্রোটেকশন নিয়েই কম-বেশি বাইরে তো বেরতেই হবে। তাই সাজগোজ মাস্ট। বছরকার দিনে বাইরে না খেলেই বা চলে কী করে? তাই কীভাবে সাজবেন, কী খাবেন ,সব কিছু নিয়ে লাস্ট মোমেন্ট সাজেশন দিচ্ছেন শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়।
মেকআপ
ত্বক সুন্দর রাখার প্রথম পদক্ষেপ হল ত্বক আর্দ্র রাখা। কাজেই ময়শ্চারাইজার লাগাতে ভুললে চলবে না। ত্বকের কথা মাথায় রেখে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। আর ভেজা ত্বকে ময়শ্চারাইজার লাগানো হল প্রাথমিক কাজ।
সাজতে গেলে ফাউন্ডেশন তো লাগবেই। ত্বকের থেকে হাল্কা শেডের ফাউন্ডেশন লাগালে ত্বকে জেল্লা আসে না। তাই নিজে কেনার সময় কব্জিতে নয়, গালে লাগিয়ে দেখে নিন। নিজে সন্তুষ্ট না হলে দু’ধরনের ফাউন্ডেশন মিশিয়ে লাগান। আর এই দু’ধরনের ফাউন্ডেশনের মধ্যে একটা গায়ের রঙের থেকে একটু গাঢ় হবে, আর অন্যটা একটু হালকা। চাপা রং হলে পাউডার ফাউন্ডেশন ব্যবহার না করাই ভালো।
খুব বেশি চকচকে লিপস্টিক লাগাবেন না, বিশেষত যাঁদের গায়ের রং কালো। লাল, স্ট্রবেরি, কোরাল, গোলাপি বা বাদামি যে কোনওটাই ব্যবহার করতে পারেন। তবে ম্যাট ফিনিস হলে দেখতে ভালো লাগে। আগে লিপলাইনার দিয়ে ভালো করে ঠোঁট এঁকে তার ওপর লিপস্টিক লাগাবেন। আর ঠোঁট হাইলাইট করতে চাইলে লিপস্টিক লাগানোর আগে ঠোঁটে অল্প করে কনসিলার লাগিয়ে নেবেন। গায়ের রং ফরসা হলে গ্লসি লিপস্টিকে কোনও বাধা নেই।
আই শ্যাডো হাল্কা রঙের নয়, গাঢ় রঙের হলেই ভালো লাগবে। তাই সব সময় বোল্ড শেড নির্বাচন করুন। পার্পল, গ্রিন,কপার, সিলভার, পিঙ্ক আর ব্রাউন খুব ভালো দেখাবে ।
সাজের আগে অবশ্যই ভ্রু প্লাক করে নেবেন। ঠিকঠাক শেপে না থাকলে কোনো সাজই খুলবে না। ভ্রু আরো ভালো দেখানোর জন্য ব্রাউন পেনসিল ব্যবহার করুন। কালো পেনসিল কখনওই ব্যবহার করবেন না। এতে সাজটাই মাটি হয়ে যাবে।
গায়ের রং ফরসা হলে কোনও কিছু নিয়েই বেশি ভাবতে হয় না। কিন্তু রং কালো বা চাপা হলেই ভাবতে হয়। এ ক্ষেত্রে মহিলাদের সোনালি আর গোলাপি রঙের মিশ্রণের ব্লাশার লাগালে আলাদা রকমের সৌন্দর্য খোলে।
চুলের রং করানোর আগে মাথায় রাখুন চোখের মণির কথা। চোখের মণি বাদামি হলে বার্গান্ডি ও ব্রাউন হলে ভালো লাগবে। আর চোখের মণি কালো হলে ব্রাউন ভালো লাগবে। তবে চুলে রং করানোর আগে খেয়াল রাখুন চুলের স্বাস্থ্য যাতে ভালো থাকে। নয় তো এ ধরনের রাসায়নিক ব্যবহারে চুলের বারোটা বেজে যেতে পারে।
তুলির টানে চোখের সাজ
চোখের ওপরে ও নীচে মোটা করে আইলাইনার না লাগিয়ে ঘন কাজল লাগান। কারণ আইলাইনার সাধারণত চোখের ওপরের পাতায় লাগানোর চল। নিজের ত্বকের সঙ্গে মিলিয়ে হালকা আই শ্যাডো লাগান। আর চোখের ওপরে লাগান ঘন কাজল। এতেই সুন্দর লাগবে। এর ওপরে অল্প করে মাসকারা লাগাতে পারেন। ফরসা হলে গোলাপির যে কোনও টোনের আই শ্যাডো লাগাতে পারেন। গায়ের রং চাপা হলে কালো, ডার্ক ব্রাউন অথবা গ্রে আইশ্যাডো লাগাতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বক হলে ক্রিম বেসড স্কিন টোনের আই শ্যাডো কেবল চোখের ওপর দিকে দেওয়া যেতে পারে। চোখের স্বাভাবিক সৌন্দর্য দেখাতে চাইলে ত্বকের রঙের সঙ্গে একদম মিলে যায় এমন রং দিয়ে প্রথমেই চোখের ওপর অংশটা ভরাট করে নিন । এরপর চোখের নীচে ও ভেতরের দিক দিয়ে সরু করে ব্রাউন বা কালো কাজলের রেখা এঁকে দিন। কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলেও কাজল পরতে পারেন। তখন চোখের ওপরদিকে কালো বা ব্রাউন আইলাইনার লাগিয়ে চোখের ওপরের অংশ ও ভ্রুর ঠিক নীচের অংশে হাল্কা করে স্কিনটোনের আই শ্যাডো লাগান। চড়া মেক-আপ পছন্দ করলে স্বাভাবিক রঙের আই শ্যাডোর ওপরে রং-বেরঙের পেনসিলের শেড দিতে পারেন। ঝলমলে পোশাক হলে চলতে পারে ইলেকট্রিক ব্লু, সবুজ বা সাদা রঙের লাইনার বা কাজলের প্রলেপ। অবশ্য তার আগে চোখের ওপরের অংশ ভরাট করতে হবে স্কিন টোনের আই শ্যাডো দিয়ে। আর ভুরুর তলার অংশটা শিমার আই শ্যাডো দিয়ে হাইলাইট করুন। চোখের নীচে আই লাইনার লাগানোর সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন তা যাতে পুরো মুখের সাজের সঙ্গে মানানসই হয়। আইলাইনার ও আইশ্যাডো ব্যবহার করলে তা সবার নজর কাড়ে। তাই চোখের এমন সাজ হলে ঠোঁটে হালকা কোনো লিপস্টিক লাগাবেন। নয়তো সাজ দেখতে ভালো লাগবে না।
নখও সাজান যত্নে
পুজোয় সর্বাঙ্গসুন্দর হওয়ার জন্য নখও সাজিয়ে তোলা দরকার। বড় কিংবা মাথার দিক গোল অথবা আয়তাকার যেমনই হোক নখের দিকেই নজর দেওয়া দরকার। প্রচুর সাজগোজ করেও নখ অসমান থাকলে সেই সাজ খুলবে না। পার্লারে যাওয়ার দরকার নেই, ঘরে বসেই এ কাজ করতে পারেন। আর এর জন্য দরকার কিছুটা সময় আর খানিকটা কল্পনাশক্তি।
নখ সাজানোর জন্য প্রথমেই আগের নেল পলিশ ভালো করে রিমুভার দিয়ে তুলে দিতে হবে। এরপর নখ সমান করে কেটে নেওয়া। তবে কিউটিকল কাটতে যাবেন না। এতে বিপত্তি দেখা দিতে পারে। নখ কাটার পর হাত তরল সাবান বা শ্যাম্পু আর গরম জল দিয়ে ধুয়ে মুছে নিয়ে ময়শ্চারাইজার লাগান। নেল আর্ট করার জন্য বেছে নিন প্রাথমিক কোনও রং। শুরুতেই স্বচ্ছ নেল পলিশ লাগিয়ে নিন। নেল পলিশ লাগানোর নিয়ম হল, প্রথমে নখের মাঝ বরাবর লম্বা করে তুলি দিয়ে লাগানো, তারপর বাঁ ও ডান দিকে লাগাতে হয়। শুকিয়ে গেলে পছন্দসই রং লাগিয়ে শুকিয়ে নিয়ে আবার স্বচ্ছ নেল পলিশ লাগান। শুকিয়ে গেলে তার উপর ডিজাইন করুন। টুইজার, নেল জেল বা নখের জন্য তৈরি আঠা দিয়ে পাথর, স্টিকার ও গ্লিটার লাগান। নেল আর্ট স্টোরে সব উপকরণই কিনতে পাওয়া যায়। ফ্লাট বোতাম বা ফুল, পাতাও কিনতে পারেন। পাথর বা স্টিকার দু’ভাবে লাগানো যায়। যেমন আঠা দিয়ে নখে লাগিয়ে শুকিয়ে গেলে তার ওপর নেল পলিশ লাগানো যেতে পারে। নয় তো আগে নেল পলিশ লাগিয়ে তার ওপর আঠা দিয়ে পাথর, স্টিকার ও গ্লিটার লাগানো যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের গ্লিটারযুক্ত নেল পলিশও কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন। আবার নেল পলিশ লাগিয়ে তার উপর ডাস্ট গ্লিটার ছড়িয়ে দিলেও ভালো লাগবে। এখন ব্রাশ পেন্টিং, টেপিং, এয়ারব্রাশ নেল আর্ট ও ডিজি আর্ট খুব চলছে।
কী খাবেন বা খাবেন না?
পুজোর সময় বাইরের খাবার না খেলে চলে! বিরয়ানি, রোল, চাউমিন কিংবা ফুচকা–যা মন চায় খান। তবে তেল-মশলা বেশি থাকে, এমন খাবার খান রাত ১১টার মধ্যে। তারপরে একদম নয়। আর সব ধরনের খাবার একসঙ্গে খাওয়া চলবে না। কারণ আমাদের বিভিন্ন ধরনের খাবার হজমের ক্ষমতা আলাদা। ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার হজম করার ক্ষমতা এক নয়। যেমন বিরয়ানির পরে একটা মিল্ক শেক বা পান্তুয়া খেলে হজমে গোলমাল হবেই। কিন্তু একটা নরম পাকের সন্দেশ খেলে সমস্যা হবে না। আবার ফুচকা খাওয়ার পরেই রোল খেলে অম্বল আটকানো মুশকিল। কিন্তু কেউ রোল খাওয়ার এক ঘণ্টা পর ফুচকা খেলে সমস্যা হবে না। আবার মোগলাই খাওয়ার পরেই চাট খেলে গা গুলোবে ও অম্বল হবে। যদিও অনেক সময় কোনটার পর কোনটা খাবেন বা খাবেন না, তা বোঝা বা মাথায় রাখা অসুবিধার হয়ে পড়ে। তবে তাঁরা যা করতে পারেন বা করা উচিত তা হল–কোনও খাবার খাওয়ার পর অন্ততপক্ষে দেড় ঘণ্টা ব্যবধানে অন্য খাবার খাবেন। কমপক্ষে এক ঘণ্টা পর দ্বিতীয় খাবার খেতে হবে।। তবে ২ ঘণ্টা গ্যাপ দিতে পারলেই ভালো। আর তেল-মশলাদার খাবার খাওয়ার পর লেমন বেসড বা লেবু আছে, এমন ঠান্ডা পানীয় খেলে খাবার সহজে হজম হয়ে যায়। কারণ, এর ফসফরিক অ্যাসিড গা গুলোনো বা অম্বল দূরে রাখে। তবে কোলা জাতীয় পানীয় খেলে অ্যাসিড হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি খাবার হজম করতে চাইলে পান খান। তবে চুন, খয়ের বা জর্দা বাদ দিয়ে। বাচ্চারা আইসক্রিম খাওয়ার বায়না করলে তা দিতেই পারেন। আইসক্রিম খাওয়ার পর স্বাভাবিক জল খাইয়ে দিলে আর গলায় ঠান্ডা লাগবে না। রেস্তরাঁয় খাওয়ার সময় একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, পুজোর সময় অনেক পরিমাণে খাবার তৈরি হয় বলে গুণের মান ঠিক নাও থাকতে পারে। এটা মেনে নিতে হবে। যে কারণে একই রেস্তরাঁয় অন্য সময় যে খাবারের যেমন স্বাদ, তা পুজোর সময় পাওয়া যায় না। অনেক জায়গায় মেনুও অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়। তাই ঠিক খাবার নির্বাচন করতে হবে। খুব বেশি তেল মশলাদার হলে তার থেকে সমস্যা হতে পারে।
তবে পুজোয় যেমনই সাজুন না কেন, সঙ্গে জল নিতে ভুলবেন না। এ সময় যত পেটের সমস্যা হয়, তার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী হল জল। রেস্তরাঁয় খেলেও সেখানের সাধারণ জল না খেয়ে বোতলের জল আলাদা করে কিনে নিতে হবে। দিনের বেলা ঘুরতে বেরলে ডাব খান। কারণ এ সময়ে রোদের তাপ যথেষ্টই থাকে। তাই ডিহাইড্রেশনের থেকে বাঁচার জন্য ডাব খাওয়া দরকার। ডাব হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচাতেও সাহায্য করে।
আর ডায়াবেটিক রোগীরা বাইরে খেতে গেলে গ্রিলড মাছ বা চিকেন খেতে পারেন। বেকড খাবারও খেতে পারেন। তবে তা কন্টিনেন্টাল বেকড নয়, ইন্ডিয়ান খাবারে যে দই দিয়ে বেক করা হয়, তাই খান। দিনের বেলা বাড়িতে থাকলে টক দই বেশি করে খেতে হবে। নরম পাকের সন্দেশ খেতে পারেন, কড়া পাক একেবারেই নয়। কারণ কড়া পাকের সন্দেশ অনেক সময় খারাপ সন্দেশ দিয়েও করা হয়। আর পুজোর সময় ভাজা মিষ্টি এড়িয়ে চলুন। অনেকে ঘুম না আসার জন্য বেশি করে কফি খান। যদিও এটা খুব ভুল ধারণা, কফি খেলে ঘুম আসবে না। বরং কফি না খাওয়াই ভালো। আরেকটা ব্যাপার হল, পুজোর সময় বাঙালি যে ঐতিহ্য আছে, যে নিয়ম আছে, যেমন ষষ্ঠী ও অষ্টমীর দিন নিরামিষ খাওয়া, নবমীর দিন আমিষ খাওয়া এই নিয়ম মেনে চলা খুব ভালো। এই সব খাবার আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম খাবারের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এ সব নিয়ম খুবই বৈজ্ঞানিক। এতে আমরা উৎসবও উপভোগ করতে পারি, আবার শরীরও ঠিক থাকে।