রঙিন জল বলতে যাঁরা অন্যরকম জলের কথা ভাবেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে নিরাশ হবেন কালো জলের কথা শুনলে। যদিও যতই কালো হোক না কেন এই জল খুবই স্বাস্থ্যকর। জেনে নিন ‘ব্ল্যাক ওয়াটার’-এর উপকারিতা। জানাচ্ছেন শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্প্রতি সেলিব্রিটিদের দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্ল্যাক ওয়াটার নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে। আসলে এই কালো জল হল অ্যালক্যালাইন জল, যাতে থাকে প্রায় ৭০ শতাংশ মিনারেল। তাই এর এমন রং।
আমরা সবাই জানি, শরীরের জন্য জল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের শরীরে যথেষ্ট জল থাকে। সেই জলের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য দিনে অন্তত ৮-৯ গ্লাস জল পান করা দরকার। পানীয় জল আমাদের কাজে এনার্জি আনে, হজমক্ষমতা বাড়ায়। এমনকী ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
আর ব্ল্যাক ওয়াটার শরীরে গেলে লাভ অনেক বেশি। কারণ স্বাস্থ্যের জন্য এই জল খুবই উপকারী বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। অনেকেই নামী-দামি কোম্পানির ওয়াটার পিউরিফায়ার ব্যবহার করেন। তাঁরা মনে করেন, পরিশুদ্ধ এই জলই শরীরের পক্ষে ভাল। তাঁদের এই ধারণা সঠিক নয়। কারণ ওয়াটার পিউরিফায়ারে জল শুদ্ধ করতে গিয়ে দরকারি খনিজও নষ্ট হয়ে যায়। যা থেকে শরীর বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া এই জলে পিএইচ স্তরও অনেক কম থাকে। ফলে গ্লাসের পর গ্লাস এই জল পান করলেও শরীর তা থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করতে পারে না। কিন্তু এই ব্ল্যাক ওয়াটার লৌহকরণ করা বলে তার পিএইচ স্তর সাধারণ জলের তুলনায় প্রায় ৮-৯ মাত্রা বেশি। যা শরীরে অ্যাসিড প্রতিরোধ করে। শরীরের টক্সিন বা দূষিত পদার্থ বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। আবার খুব সহজেই এই জল শুষে নিতে পারে বলে অনেকক্ষণ শরীর আর্দ্র থাকে। নানারকম মিনারেল থাকায় এই জল খাবারের পুষ্টিকর উপাদান শোষণে সক্ষম। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। করোনার সময় আর অন্যভাবে ইমিউনিটি বাড়ানোর দরকার হয় না। এই জল অম্বল, গলা-বুক জ্বালার সমস্যা থেকেও দূরে রাখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জলে শুধু যে মিনারেলস থাকে তেমন নয়, থাকে যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেনও। তাই জল শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়। মিনারেলস বেশি থাকায় ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার বা হাই কোলেস্টেরলের রোগীদের খুবই উপকারে আসে। শরীর অনেক বেশি সময় আর্দ্র রাখে। পেশীর ও কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
এক লিটারের দাম প্রায় দুশো টাকা। তাই সামর্থ থাকলে নিশ্চিন্তে ব্ল্যাক ওয়াটার পান করুন। শরীর তাজা রাখুন। কাজেই সে যতই কালো হোক, তার গুণের কোনও তুলনা নেই।
সন্তানসম্ভবা মহিলারাও নিশ্চিন্তে এই জল পান করতে পারেন। এমনটাই জানালেন, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ইন্দ্রনীল সাহা। তাঁর মতে, গর্ভাবস্থায় মহিলাদের অনেক বেশি জল খাওয়ার দরকার হয়। কারণ অ্যামনিওটিক স্যাকের ১০০ শতাংশই জল। সেই জলের পরিমাণ ঠিক রাখতে শরীরে জলের সরবরাহ করতে হয়। এ ছাড়া মর্নিং সিকনেস বা অনেককে বারে বারে শৌচাগারে যেতে হয়। ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। অ্যালক্যালাইন ওয়াটার বমিভাব দুর করে, স্টমাক ভাল রাখে। তিনি আরও জানান, গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটা সাধারণ সমস্যা। কারণ এই সময়ে আয়রন সাপ্লিমেন্ট খেতে হয়, হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, পাশাপাশি জরায়ুর আকার বড় হয়ে যাওয়ার জন্য মলদ্বারে চাপ পড়ে। কখনও কখনও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করার জন্য ল্যাক্সেটিভ জাতীয় কিছু খেতে হয়। কিন্তু এই ব্ল্যাক ওয়াটার প্রাকৃতিকভাবেই এই সমস্যা দূর করে। এ ছাড়া অম্বল, গলা-বুক জ্বালা করা সেকেন্ড ও থার্ড ট্রাইমস্টারে খুব কমন সমস্যা। ক্রমাগত হরমোনের তারতম্যের জন্য ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্টের মাসল অ্যাফেক্টেড হয়। সেই কারণেই এমন সমস্যা হয়। তাঁর মতে, পাকস্থলিতে অ্যাসিডের মাত্রা কমায় ব্ল্যাক ওয়াটার। ফলে এই সব সমস্যা দূর হয়।
যদিও কালো জলের দাম অনেকটাই বেশি। বলা যায়, সাধারণ মানুষের নাগালে বাইরে। এক লিটারের দাম প্রায় দুশো টাকা। তাই সামর্থ থাকলে নিশ্চিন্তে ব্ল্যাক ওয়াটার পান করুন। শরীর তাজা রাখুন। কাজেই সে যতই কালো হোক, তার গুণের কোনও তুলনা নেই। ক্রিকেটার বিরাট কোহলির ফিটনেস রেজিমে দেখা গেল, তিনি ব্ল্যাক ওয়াটার পান করেন। এই জল নাকি তাঁকে মানসিক দিক থেকেও সুস্থ রাখে। আরও জানা যায়, শুধু তিনি নন, শ্রুতি হাসান, উর্বশী রাউতেলা, মালাইকা অরোরার মতো অনেক তারকারাও এই জলেই চুমুক দেন।