করোনার জন্য অনেকেই মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে কী করবেন? জানাচ্ছেন ডাঃ ইন্দ্রনীল সাহা
অনেকেই আছেন, যাঁরা এমনিতেও দিনের পর দিন হয়তো ঘরের বাইরে বেরন না। কিন্তু কোভিড-১৯ বা করোনার জন্য লকডাউন হওয়ার পর তাঁরাও মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ছেন। আর যাঁরা রোজকার কাজে বেরতেন, তাঁদের অবস্থা তো আরও কাহিল। সময়েই যেন কাটতে চাইছে না। তার ওপর আছে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর খবর। এই সব কারণে সবরকম কাজের সঙ্গে জড়িতদের কিছু আবেগ ও আচরণগত সমস্যা হচ্ছে বা হতে পারে। কারা কী ধরনের সমস্যার শিকার হতে পারেন–
সাধারণের ক্ষেত্রে যেমন:
ভবিষ্যতের কথা ভেবে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা।
হাঁচি, কাশি বা গলা ব্যথা হলেই অসুখের দুর্ভাবনা মাথায় চেপে বসা।
আগামী দিনে কী হবে তা ভেবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস মজুতের চিন্তা।
সোশ্যাল মিডিয়া ও নানারকম খবরের প্রতি বেশি মন দেওয়া।
আরও বেশি করে মুখ বা নাকে হাত দেওয়া।
যাঁদের সংক্রমণ হয়েছে তাঁদের সমস্যা হল–
অসুখের ভয় ও নিভৃতবাস এড়ানোর জন্য রোগ লুকিয়ে রাখা।
অসুখ হওয়ার জন্য নিজেকে দোষী ভাবা।
নিজের অসুখ অন্যদের মধ্যে ছড়ানোর জন্য পাপবোধ।
ভবিষ্যতে কী জটিলতা দেখা দিতে পারে, তা নিয়ে উদ্বেগ ও ভয়।
পরিবারের অন্যদের জন্য অহেতুক দুশ্চিন্তা।
আর সন্দেহভাজন রোগীদের সমস্যা হল–
আলাদা থাকার জন্য একঘেয়েমি ও একাকীত্ব।
পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য নিয়ে অহেতুক চিন্তা।
অসুখ বহন করা বা রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য নিজেকে অপরাধী ভাবা।
নিজের বা পরিবারের কাজ করতে না পারার জন্য অপরাধবোধ।
পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের সমস্যা হল, বেশি পরিমাণ রোগী ও যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা নিয়ে কীভাবে কাজ করবেন তা নিয়ে উদ্বেগ। তা ছাড়া–
নিজের ভূমিকা ও কর্মদক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ।
দীর্ঘ সময় একনাগাড়ে কাজ করা ও জটিল রোগীদের দেখাশোনা করার জন্য নিজের যত্ন না করতে পারা থেকে হতাশা।
নিজেকে দোষারোপ করা।
যে কোনও সময়ে কিছু খারাপ ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা করা।
এ জন্য যা যা করণীয়, তা হল–
সবরকম জল্পনা ও গুজব এড়িয়ে যাওয়া।
ভালো করে বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও সামাজিক ভাবে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা না করা।
নিজেকে সক্রিয় রাখা।
ব্যালান্সড ডায়েটের দিকে নজর দেওয়া ও ফাস্টফুড বাদ দেওয়া।
শিশু ও পড়শিদের কাছে নিজেকে একজন রোল মডেল হিসাবে তুলে ধরা।
গুজবে কান না দেওয়া ও তা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার না করা।
কাজ ও বিশ্রামের সামঞ্জস্য রেখে চলা।
সহানুভূতির সঙ্গে অন্যের সঙ্গে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করা।
পরিবারে বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি বেশি যত্নবান হওয়া।
নিজের হবি ও রোজকার রুটিনকে নতুন রূপ দেওয়া।
বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখা।
আর স্বাস্থ্যকর্মীদের যা যা করণীয়, তা হল–
আগে থেকে এই কাজের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা।
নিজের কাজ সম্পর্কে পরিষ্কার বা স্বচ্ছ ধারণা থাকা।
কেসগুলোর রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করা।
স্বাস্থ্যকর জটিল খাবার খাওয়া ও বিশ্রাম নেওয়া।
নিজের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকা।
ঠান্ডা মাথায় কাজ করার চেষ্টা করা।
ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল এড়িয়ে যাওয়া বা নিয়ন্ত্রণ করা।
একে অন্যের দিকে নজর দেওয়া।
তবে মনে রাখতে হবে নিজেকে রক্ষা করাও সমান জরুরি। তাই–
কাজের থেকে খানিকটা বিরতি নিতে গিয়ে নিজেকে স্বার্থপর ভাববেন না, অন্যের ও নিজের ভাল থাকার জন্য এটা জরুরি।
সারাক্ষণ কাজ করা মানে এমন নয় যে, আপনি সবচেয়ে বেশি কিছু করছেন। বিশ্রাম না নিলে কাজের মান খারাপ হতে বাধ্য। এ কথা ভুলতে চলবে না যে, আপনি ছাড়াও অন্যরাও আছেন রোগীদের সাহায্যের জন্য।