মিউকরমাইকোসিস থেকে সতর্ক থাকুন

প্রতীকী ছবি–সংগৃহীত।

এক করোনা ভাইরাসে রক্ষা নেই, তার ওপর শুরু হয়েছে মারণ ছত্রাকের সংক্রমণ। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা ! জানাচ্ছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক জয়ন্ত ভট্টাচার্য

ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য

মিউকরমাইকোসিস। তার সংক্রমণ শুরু হয়েছে। বিষয়টি জটিল হয়ে উঠছে দেখে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সব রাজ্যকে সতর্ক করেছে। এখন প্রশ্ন–

মিউকরমাইকোসিস কী?

    এক ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ। সাধারণত ছত্রাকের সংক্রমণ আমাদের শরীরের বাইরের দিকে অর্থাৎ ত্বকে হয়। শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে যেমন কুঁচকি ও অন্যান্য জায়গায় হয়ে থাকে। আক্রান্ত জায়গা গোল গোল র‍্যাশের মতো দেখায়। খুব চুলকানি হয়। এই জাতীয় সংক্রমণকে বলা হয় টিনিয়া করপোরিস। কিন্তু মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণ ঘটে শরীরের ভিতরে। একে চলতি কথায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস-ও বলা হয়। কারণ, সংক্রমণের পরে নাক দিয়ে কালো রক্ত বা মৃত টিসু বেরতে পারে।

কীভাবে এই সংক্রমণ হয়?

    কিছু ছত্রাক প্রথমে যায় নাকে, তারপরে নাকের পাশে ও পিছনের সাইনাস এবং প্যারান্যাজাল সাইনাসে। সেখান থেকে এর যাত্রাপথ দু’দিকে–একদিকে দাঁতে এবং চোখে যেতে পারে, অন্যদিকে ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। চোখ থেকে আবার মাথায় যেতে পারে। ফুসফুস এবং মস্তিষ্ক দুটোতে ছড়ানোই খুব বিপজ্জনক। সে ক্ষেত্রে মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রবল। মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুতে তেমনই দেখা গিয়েছে। এই ফাঙ্গাস সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার জন্য জায়গাটা স্যানিটাইজ করা, রোগীর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি স্যানিটাইজ করা দরকার। এই স্বাস্থ্যবিধি মানলে সংক্রমণের আশঙ্কা খুব কম থাকে।

সংক্রমণের কারণ কী?

    কোভিড-১৯-এর চিকিৎসায় রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে কখনও হাই প্রেসার অক্সিজেন, স্টেরয়েড ইত্যাদি  দিতে হয়।  অবস্থা খারাপ হলে ভেন্টিলেটর, একমো সাপোর্ট দেওয়ার দরকার হয়। এই চিকিৎসায় রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে সাপ্রেস করা হয়।  ফলে অনেক সময় সাইটোকাইন স্টর্ম দেখা দেয়, যার থেকে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার, হার্ট ও লাংস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকার জন্য রোগীকে যে ওষুধ দেওয়া হয়, তাতে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় । তখন আর ফাঙ্গাসের বিরূদ্ধে লড়াই করতে পারে না।

সংক্রমণের উপসর্গ কী? 

    চোখ ও নাকের চারদিকে ফুলে লাল হয়ে যাওয়া, ব্যথা হওয়া। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, দাঁতে ব্যথা ইত্যাদি অন্যতম উপসর্গ। এ ছাড়া চোখে ঝাপসা দেখার মতো সমস্যাও হতে পারে।

কাদের এই সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে? 

    ডায়াবেটিস রোগীরা যদি কোভিডে আক্রান্ত হন, তাঁদের ঝুঁকি বেশি থাকে। কারণ ডায়াবেটিসের জন্য এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। কোভিডের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের জন্য তা আরও কমে যায়। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের কোভিড থেকে দূরে থাকার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

রোগের উপসর্গ কতদিনে দেখা দেয়?

    এই রোগ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিপজ্জনকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রচণ্ড যন্ত্রণা থাকে। কাজেই কোভিডের থেকে সেরে ওঠার পরেও মিউকরমাইকোসিসের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার, যত তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করা যায় ততই মঙ্গল। অনেক সময় ওষুধেই কাজ হয়। তবে কখনও কখনও অপারেশনেরও দরকার হতে পারে। তবে কোভিডের জন্য যে নিয়ম পালনের কথা বলা হয়েছে, যেমন হাত বার বার সাবানজলে বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করা, হাত সাবান জলে না ধুয়ে বা ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজারে পরিষ্কার না করে  নাক, চোখ, গাল বা মুখ স্পর্শ না করা,  মাস্ক যথাযথভাবে ব্যবহার করা ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখলে এই ফাঙ্গাসের থেকে অনেকটা সুরক্ষিত থাকা যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here