হায় বাম!

ছবি–সংগৃহীত

বারে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর রাজ্য থেকে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল তৃতীয় শক্তি বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট।  রাজ্যে মেরুকরণের ভোটে শূন্য হাতে ফিরতে হল বামেদের। নিজের গড় মুর্শিদাবাদেই খালি হাতে ফিরতে হল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরিকে। বঙ্গ রাজনীতিতে প্রথমবার পা রেখে খাতা খুললেও, একেবারেই প্রভাব ফেলতে পারলেন না ‘ভাইজান’ আব্বাস সিদ্দিকি।

    এক বর্ষীয়ান সিপিএম নেতার কথায়,“আমাদের সমর্থকরা ভেবেছিলেন যে বিজেপিকে প্রতিহত করতে তৃণমূলকে ভোট দেওয়া উচিত। এ ভাবে আমরা তৃণমূলের কাছে আমাদের জিতে থাকা আসনগুলিও হারিয়েছি। তবে আমরা জনগণের পক্ষে কাজ করছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা কোভিড-ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের এখনও সাহায্য করছেন। যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।” পাশাপাশি ২৯২ আসনে মধ্যে ১টি আসনে কংগ্রেসের জয় লাভে মুষড়ে পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের প্রধান অধীররঞ্জন চৌধুরিও। তিনিও মেরুকরণের রাজনীতিকেই দুষেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা জনগণকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি যে, কংগ্রেস-ই ধারাবাহিকভাবে বিজেপি এবং তার সাম্প্রদায়িক আদর্শের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।’’

    যাই বলুন বাম-কংগ্রেস নেতারা লক্ষ্যণীয় হল, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনেই বাংলায় বাম-কংগ্রেসের দৈনদশা প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। বামেরা ৭ শতাংশ এবং কংগ্রেস সাড়ে ৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। একুশে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে একে অপরের হাত ধরে ভোট বৈতরণি পার করার চেষ্টা করছিল মরিয়া দুই দল। সঙ্গে দোসর হিসাবে জুটেছিলেন ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের নেতা আব্বাস সিদ্দিকি। কিন্তু ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল এই তিন দলের সমাহার, বাংলার মানুষকে একেবারেই প্রভাবিত করতে পারেনি। উলটে যেটুকু জমি বাম এবং কংগ্রেসের ছিল, সেটাও হারাতে হল।

    আসলে রাজ্যে মূলত মেরুকরণের ভোট হওয়ায়, তৃতীয় বিকল্পের কথা ভোটারা ভাবেননি। রাজ্যে মেরুকরণের ফলে সব ভোট বাম এবং তৃণমূলের মধ্যে ভাগ হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে, বিজেপিকে আটকাতে বাম এবং কংগ্রেসের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ভোটাররা সেরা বিকল্প হিসাবে বেছে নিয়েছেন তৃণমূলকেই। আব্বাস সিদ্দিকির হাত ধরার ফলে একটা সাম্প্রদায়িক তকমা বামেদের নামের পাশেও লেগে গিয়েছিল। সেটাই সম্ভবত তথাকথিত সেকুলারদের তৃণমূলের দিকে ঠেলে দিল। বাম এবং কংগ্রেসের জোটকে ২০১৬ সালেই প্রত্যাখ্যান করেছিল মানুষ। তার উপরে ভাইজানকে জোটে টানায় বাম-কংগ্রেসের আরও কিছুটা ক্ষতি-ই হল। পরিণতিতে  স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ‘বামহীন’। হায় বাম!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here