ডিজিটাল ডেস্ক, ২ মে : দুশোর বেশি আসন নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য বাংলার ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এমনটি যে ঘটবে, তা প্রত্যাশা করতে পারেনি পদ্মশিবির। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী–ভেবেই নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ভোটাররা এ বার বদল চাইছেন। তাই তাঁরা ভোটযুদ্ধে নেমে বঙ্গবাসীকে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবাসী সেই বাংলার মেয়েকেই চেয়েছেন। যদিও সেই মেয়ে রাজ্যে পালাবদলের কাণ্ডারি তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট বৈতরণি পার হতে পারলেন না। রাজ্যে পালাবদলের আতুঁড়ঘর নন্দীগ্রামে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারির কাছে হার মানতে হল।
নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনে এক সময়ে শুভেন্দু ছিলেন মমতার ছায়াসঙ্গী। ঘাসফুল ছেড়ে শুভেন্দু পদ্মশিবিরে যোগ দেওয়ায় তাঁকে হারাতে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন মমতা। শুভেন্দুও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ভোটযুদ্ধের মাঠে নামেন। যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে পায়ে চোট পান মমতা। এক পায়ে প্লাস্টার বেঁধে নন্দীগ্রাম থেকে সাগর, সাগর থেকে পাহাড়–প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। বলেছেন–এক পায়ে খেলা হবে। সেই খেলায় কার্যত ধরাশায়ী বিজেপি। দুশোর বেশি আসনে তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হলেন। কিন্তু নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর কাছে গোল খেয়ে গেলেন তৃণমূল নেত্রী। যা নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘আমাদের যিনি প্রতিপক্ষ, মুখ্যমন্ত্রীও অনেক লড়াই করেছেন। একবারে সফল হননি। লম্বা অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও পার্টি কর্মীদের নিয়ে লড়াই করেছেন।’ এরপরই যোগ করেন, ‘যাঁর নামে নির্বাচন লড়া হল, তিনি হেরে গেলেন, অথচ পার্টি জিতল! এটাও ঐতিহাসিক হয়েছে। গণতন্ত্রের এই বিচিত্র গতি, সেটাও আমাদের দেখতে হল।’
রবিবার মমতা ও শুভেন্দুর জয়-পরাজয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। মমতা, নাকি শুভেন্দু জিতেছেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দেয়। সংবাদসংস্থা এএনআই টুইট করে জানায়, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরে ১২০০ ভোটে মমতা জয়ী হয়েছেন। কিন্তু পরে জানা যায় শুভেন্দু জিতেছেন। এ নিয়ে কমিশনের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, ‘নন্দীগ্রামের মানুষের রায় মেনে নিচ্ছি। কিন্তু ওখানে ভোট লুঠ হয়েছে। আদালতে যাব আমরা।’ দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে নির্বাচন কমিশন অবশ্য ঘোষণা করে, নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারিই জয়ী হয়েছেন। পুনর্গণনা হবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছে কমিশন। মমতা হেরে গেলেও রাজ্যে জয়ের জন্য মমতাকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অভিনন্দন জানিয়েছেন রাহুল গান্ধীও। আর ‘বাংলায় মানুষের রায়’কে সম্মান জানিয়ে টুইট করেছেন অমিত শাহ। রাজ্যে বিজেপিকে শক্তিশালী করার জন্য তিনি রাজ্যবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ বারের ভোটে বামেদের সঙ্গে জোট করে রাজ্যে ভোটযুদ্ধে নামে কংগ্রেস। কিন্তু তাদের ভরাডুবি হয়েছে। এই জোটে সামিল হয়ে ১টি আসনে জয় পেয়েছে আব্বাস সিদ্দিকির দল আইএসএফ।