করোনার টিকা সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো কিছু ভুল খবরের জন্য অনেকেই করোনার টিকা নিতে ভয় পাচ্ছেন। করোনার টিকা নিয়ে যাবতীয় সন্দেহ নিরসন করার চেষ্টা করেছেন অ্যাকসেস হেলথ ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণাঞ্চলের চেয়ারম্যান ডাঃ কৃষ্ণ রেড্ডি।
করোনার টিকা কি নিরাপদ?
এই টিকা পুরোপুরি নিরাপদ। বলছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক থেকে চিকিৎসকমহল। একথা ঠিক, এর আগে এত কম সময়ে কোনও টিকা বাজারে আসেনি মানে প্রয়োগের ছাড়পত্র পায়নি। তার মানে এই নয় যে, এর কার্যকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাচাই না করেই তা চালু করা হয়েছে। বহু মানুষের উপর পরীক্ষা করার পর আন্তর্জাতিক ভ্যাক্সিনের সর্বোচ্চ নিয়ামক ও নির্ধারক সংস্থার অনুমতি পাওয়ার পরেই তা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাজেই এই টিকা নেওয়ার বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। বরং যত তাড়াতাড়ি নেওয়া যায় ততই ভাল।
সকলকেই কি টিকা নিতেই হবে ?
সবাইকে তো এই টিকা দেওয়া হচ্ছে না। কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তবে যাঁরা টিকা নেওয়ার উপযুক্ত, তাঁরা নিজেরা চাইলে তবেই নিতে পারবেন। কারওর কোনও বিশেষ সমস্যা থাকলে এবং চিকিৎসক নিষেধ করলে তাঁরা ছাড়া অন্যদের টিকা নেওয়াই ভাল। কারণ এতে শুধু সেই ব্যক্তি নয়, তাঁর বাড়ির অন্যান্য সদস্য, বন্ধু, সহকর্মী সকলেই নিরাপদে থাকতে পারবেন।
টিকা নেওয়ার পর কী কী সমস্যা হতে পারে?
যে কোনও টিকা নেওয়ার পর যেমন সামান্য কিছু উপসর্গ দেখা দেয় তেমন কিছু হতে পারে। যেমন, জায়গাটা একটু ফুলে যাওয়া, অল্প জ্বর আসা কিংবা পেশীতে ব্যথা হওয়া। এ ছাড়া যাঁদের অ্যালার্জির প্রবণতা আছে, তাঁদের কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যদিও তা খুবই সামান্য। কখনওই এর থেকে সাংঘাতিক কোনও অসুবিধা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ কারণেই টিকা নেওয়ার পরে সেখানে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার কথা বলা হয়। যাতে কোনও অসুবিধা হলে সঙ্গে সঙ্গে তার চিকিৎসা করা যায়।
টিকা নিলে করোনা সংক্রমণ আর হবে না তো !
টিকার দু’টি ডোজ নেওয়ার পর আমাদের শরীরে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষমতা গড়ে ওঠে। তার মানে এমন নয় যে, পরবর্তীকালে এই সংক্রমণ হবে না। আসল কথা হল, টিকা নেওয়ার পর করোনা হলেও তা জটিল আকার নেবে না।
হার্টের অসুখ বা ডায়াবেটিস থাকলে কি টিকা নেওয়া যাবে?
হার্টের অসুখ বা ডায়াবেটিস ছাড়াও অন্যান্য কোমর্বিডিটি থাকলে তাঁদের অবশ্যই করোনার টিকা নেওয়া দরকার। কারণ, এই ধরনের ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হলে তা বেশিরভাগ সময়ে জটিল হয়ে ওঠে। তখন হাসপাতালে ভরতি করতে হয়। তাঁদের অনেককে আইসিইউতে, এমনকী ভেন্টিলেশনে থাকতে হয়। এত করেও অনেক সময় রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। তবে সন্তানসম্ভবা মায়েদের আপাতত এই টিকা না নেওয়াই ভাল।
রক্ত তরল রাখার ওষুধ খেলে কি টিকা নেবেন?
রক্ত তরল রাখার জন্য দু’ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। যেমন– অ্যান্টিপ্লেটলেটস আর অ্যান্টিকোয়াগুলেন্টস। দ্বিতীয় ধরনের ওষুধের জন্য হিমাটোমা বা রক্তপাত হতে পারে। যেহেতু এই টিকা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাই কিছু সতর্কতা মেনেই তা দেওয়া হয়। কাজেই যাঁরা রক্ত তরল রাখার ওষুধ খান, তাঁরা টিকা নেওয়ার আগে চিকিৎসককে তা অবশ্যই জানিয়ে দেবেন। তবে অ্যান্টিপ্লেটলেটসের ওষুধ খেলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
বয়স ৭০ বা তার বেশি, টিকা কি নিতে পারেন?
কোমর্বিডিটি থাকা এবং বয়স্কদেরই করোনায় বিপদ বেশি হতে দেখা যাচ্ছে। তাই সরকার ৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের আগে এই টিকা দেওয়া শুরু করেছে। কাজেই ৭০ বছর বা তার বেশি বয়স্করা নির্দ্বিধায় এই টিকা নিতে পারেন।
করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে কি টিকা নেওয়ার দরকার?
অবশ্যই দরকার আছে। কারণ একবার করোনায় আক্রান্ত হলে পরে এই অসুখ আর হবে না, তেমন নয়। যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তা কতদিন সুরক্ষিত রাখবে, তা জানা নেই। দেখা গিয়েছে, অনেকেই দু’বার এই অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন। কাজেই টিকা নিলে অনেকটা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন।
টিকা নিলেই কি মাস্ক থেকে মুক্তি মিলবে?
বিশেষজ্ঞরা বারবারই বলছেন, করোনার টিকা নেওয়ার পরেও বাইরে বেরলে মাস্ক অবশ্যই পরতে হবে, শারীরিক দূরত্ব মানতে হবে এবং বারবার হাত সাবান জল বা স্যানিটাইজার দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।