দিদির দূত না ভূত!

ছবি–সংগৃহীত।

ভোটের বাদ্যি বাজতে আর বেশি দেরি নেই। সরকারিভাবে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাই ভোটের প্রচারের পালে হাওয়া দিতে  বিজেপি’র রথযাত্রার পালটা কর্মসূচি ‘দিদির দূত’। তৃণমূলের এই প্রচার নিয়ে সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন–দিদির দূত আবার কী?

    দিদি অবশ্য উত্তরবঙ্গ থেকে ঘোষণা করেছেন–সব কেন্দ্রে তিনিই প্রার্থী। কাজেই মানুষ যেন তাঁকে দেখেই ভোট দেন। আগেও বিধানসভার ভোটে দিদি একই কথা বলে রাজ্যবাসীর কাছে ভোট ভিক্ষা করেছিলেন। ২১শেও তিনি সেই একই কৌশল নিয়েছেন। তাই সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ–এই বার্তা রাজ্যবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে দিদি কিছু ‘ভূত’ আমদানি করেছেন। বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী তথা সিপিআই(এম) নেতা সুভাষ চক্রবর্তী জীবদ্দশায় একবার তারাপীঠ মন্দিরে ঢুকে দেবীর পুজো দেন। তাতে তাঁকে কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি। কারণ তিনি কমিউনিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁরই উত্তরসূরি সুজনবাবু এ বার ভূতের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিলেন। তাঁর কথার সূত্র ধরে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে–ভূত বলতে সুজন চক্রবর্তী ঠিক কী বলতে চাইছেন?

    আসলে ভোটের প্রচারে দিদির ‘দূত’ হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যাবেন তৃণমূলের  শীর্ষ নেতারা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে সম্প্রতি তার সূচনা করেছেন তৃণমূল সাংসদ দিদির-ই ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটের সময়ে বিজেপি’র রথযাত্রা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। বিধানসভা ভোট যখন রাজ্যবাসীর দুয়ারে কড়া নাড়ছে, তখন ফের বঙ্গে একই কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় তাদের রথযাত্রা বাতিলের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল । কিন্তু সেই মামলাটি খারিজ হয়ে গিয়েছে। এ বার প্রচারের পালটা কৌশল নিল তৃণমূল। বিজেপি’র রথযাত্রায় থাকছে একটি সুসজ্জিত গাড়ি। সেই গাড়িতে চেপে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছেন গেরুয়াশিবিরের নেতারা। সেই একই কায়দায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ‘দিদির দূত’ হয়ে পৌঁছে যাবেন তৃণমূলের নেতারাও। তাঁদের সঙ্গে থাকছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নেতাজি-সহ বিভিন্ন মনীষীদের ছবি। ভোট বৈতরণি পার হতে তৃণমূলের ভরসা বাংলার ওই মনীষীদের পাশে দিদির ‘দূত’ হয়ে যাঁরা অংশ নেবেন, তাঁদের মধ্যে ভেসে উঠতে পারে কোনও না কোনও বিতর্কিত মুখ। ইদানীং এমনই এক মুখ জনসমক্ষে বড্ড বকছেন। দিদি অবশ্য তাঁকে দলের মুখপাত্র করেছেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বিদূষক বলে কথিত সেই গোপাল ভাঁড় আজ যদি বেঁচে থাকতেন, তা হলে চুপ থাকতে পারতেন না। সহাস্যে হয়তো বলেই বসতেন–ওহে বাপু! দেখছি আমার মতো তোমাকে দেখেও তো লোকে হাসছে। কাজেই তুমি এখন কম কথা বল। তাতে তোমার দলেরই মঙ্গল হবে।

    এমন সদুপদেশ এ কালের ওই ভাঁড়ের মগজে ঢুকবে কিনা কে জানে! তবে আমজনতার কাছে তিনি হাসির পাত্র হয়ে উঠেছেন। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর তা কি জানেন! হয় তো জানেন, বা জানেন না। না জানলে জেনে রাখুন–দিদির ‘দূত’ হয়ে এই ‘ভাঁড়’ যদি ভোটের প্রচারে এক মুখ হয়ে ভেসে ওঠেন, তা হলে তিনি আক্ষরিক অর্থেই ‘দিদির ভূত’ হয়ে উঠতেও পারেন। আসলে এমন ধান্দাবাজরা সবসময়েই কোনও না কোনওভাবে প্রচারের আলোয় থাকতে চান। রাজনৈতিক সচেতন ভোটাররা তা ভালোই বোঝেন। কাজেই দিদির ‘দূত’ হয়ে ওইসব ধান্দাবাজরা যে কথাই বলুন, তা ভোটারদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা ভবিষ্যৎ বলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here