স্বামীজির জন্মদিবসে এ কী লজ্জা!

স্বামীজি। ছবি–সংগৃহীত

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, শ্রীঅরবিন্দ, বাল গঙ্গাধর তিলক ও বাঘাযতীন থেকে অলডাস হাক্সলিক্রিস্টোফার ইশারউডরোম্যা রোলাঁর মতো স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে বুদ্ধিজীবীদের স্বামী বিবেকানন্দের রচনা অনুপ্রাণিত করেছিল। স্বামীজির প্রয়াণের বহু বছর পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কারবিজয়ী ফরাসি সাহিত্যিক রোম্যা রোলাঁকে লিখেছিলেন, ‘‘ভারতকে জানতে চাইলে বিবেকানন্দের লেখা পড়। তার মধ্যে সব কিছুই ইতিবাচক। নেতিবাচক কিছুই নেই।’’ রোম্যা রোলাঁ লিখেছেন, ‘‘তাঁর লেখাগুলি মহান সংগীতের মতো এবং পংক্তিগুলি বেটোফেন শৈলীর মতো। চিত্তাকর্ষক ছন্দগুলি হ্যান্ডেল কোরাসের কুচকাওয়াজের মতো। আজ ত্রিশ বছর পরেও তাঁর বাণীগুলিকে স্পর্শ করলে আমার শরীরে বৈদ্যুতিক আঘাতের মতো শিহরণ জাগে। এই মহানায়কের মুখ থেকে যখন এই জ্বলন্ত শব্দগুলি উচ্চারিত হয়েছিল, তখন নিশ্চয় অনেকে এই শিহরণ অনুভব করেছিলেন!’’এমন এক সন্ন্যাসীকে নিয়ে যখন ভোটের রাজনীতি হয়, তখনও শিহরিত হতে হয়। তবে সে যুগে নয়, এ যুগে। স্বামীজির ১৫৮ তম জন্মদিবসে। 

    রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, ‘‘রামকৃষ্ণ যত মত তত পথের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিজেপি’র যে নেতারা রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দর নাম করছেন, তাঁরা এই মনীষীদের ভাবনাকে ভুল ভাবে প্রয়োগ করছেন।’’ আর রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘তৃণমূল বলছে, সব মত এক পথ হল তৃণমূল।’’ এ কারণেই কি এ যুগে স্বামীজিকে একদম চেনাই যাচ্ছে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর চেহারায় কী বিরাট পরিবর্তন! কারণ, টোটোর পিছনে লাগানো পোস্টার। যা স্বামীজির জন্মদিন উপলক্ষেই তৈরি করা হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘স্বামী বিবেকানন্দ-এর ১৫৮ তম জন্মদিবস উদযাপন।’ কিন্তু সেই পোস্টারে মনীষীর মুখ নেই। তাঁর পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে রাজনীতিক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। দার্জিলিং জেলা কমিটির তৃণমূল যুব কংগ্রেসের তরফ থেকে এই ফ্লেক্সটি তৈরি করা হয়েছে। সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এই ছবি দেখে অনেকের সঙ্গে হতবাক অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। তিনিও ওই ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে ঠাট্টা করেছেন। শ্রীলেখা লিখেছেন, “আহা… চোখ, মন আরও যা যা আছে সব জুড়িয়ে গেল দেখে।” ছবিটি তিনি সারণ দত্ত বলে যাঁর সোশ্যাল-ওয়াল থেকে নিয়েছেন, তাঁর নামও ওই পোস্টে উল্লেখ করেছেন। বিষয়টিকে নেটিজেনদের অনেকেই ‘অশিক্ষার নিদর্শন’ বলেই মন্তব্য করেছেন।

    তেমনই বিবেকানন্দের ছবির উপরে দলের ব্যানারে ঝোলানো হয়েছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ছবিও। মঙ্গলবার  চুঁচুড়ায় ঘড়ির মোড়ে বিজেপি’র তরফে বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়। সেখানেই এই দৃশ্য চোখে পড়ে। তা নিয়ে এলাকায় বিক্ষোভ দেখান  তৃণমূলকর্মীরা। বিজেপি’র বিরুদ্ধে মিছিলও বার করে জোড়াফুল শিবির। তাদের অভিযোগ, বিবেকানন্দকে অপমান করা হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী নেতাদের ছবি ঝোলানোয় কলুষিত হয়েছে তাঁর জন্মবার্ষিকী। আবার পাহাড়ে স্বামীজির মুখ বদল নিয়ে যখন সরব নেটিজেনরা, তখন চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার বলেন, ‘‘বিবেকানন্দের ছবিতে তাঁর মাথার দু’পাশে দু’টো পদ্মফুল। তার উপরে আবার বিজেপি নেতাদের ছবি। ভাবা যায়! এরা বাঙালির কলঙ্ক, বাংলার কলঙ্ক। বিবেকানন্দ কবে বিজেপি করতেন, আমি জানি না।’’ তাই বলে মনীষীর মুখ বদল! যা নিয়ে সরব নেটিজেনরা। আর চুঁচুড়ার ঘটনায় বিজেপি নেতা স্বপন পালের মত, ‘‘এতে অসুবিধার কিছু নেই। পদ্ম শুধু বিজেপির প্রতীক নয়, জাতীয় ফুল। তাই এতে অস্বাভাবিকতা কিছু নেই। আর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং দীনদয়াল উপাধ্যায়ও তো মনীষী! তাঁদের সম্মান জানানো কি অন্যায়?’’ আসলে স্বামীজির জন্মদিবস পালন নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর এ ভাবেই চলে ভোট-রাজনীতি। তবে স্বামীজি যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তা হলে এ সব দেখে তিনি হয়তো  লজ্জায় মুখ ঢাকতেন। আর শ্রীরামকৃষ্ণকে ডেকে বলেই বসতেন–তুমি আমাকে মুক্তি দাও। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here