সর্বসাধারণের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা। তা-ও সরকারি খরচে। রাজ্যের সমস্ত মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবার জন্য স্বাস্থ্যসাথি প্রকল্প নিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রকল্পে দশ কোটি মানুষকে কার্ড বিলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ভাবেই বিধানসভা নির্বাচনের আগে পরিষেবা এবং চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বাংলার মানুষের মন জিতে নিতে চাইছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। যা এককথায় বিরোধীদের ঘায়েল করতে মুখ্যমন্ত্রীর মাস্টারস্ট্রোক বলেই মনে করা হচ্ছে।
এ কারণেই এই স্বাস্থ্যসাথি কার্ডকে ‘যুগান্তকারী প্রকল্প’ বলছে তৃণমূল কংগ্রস। সেইমতো রাজ্যের ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়ছে এই স্বাস্থ্যসাথি কার্ডের জন্যই। সম্প্রতি নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তিনিও স্বাস্থ্যসাথির কার্ড করাবেন। সেইমতো সাধারণ মানুষের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে নাম নথিভুক্ত করেন মমতা। স্বাস্থ্যসাথি প্রকল্প নিয়ে রাজ্যবাসীকে খোলা চিঠিও লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে বলেছেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথি প্রকল্পে আপনাকে একজন উপভোক্তা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরে ও প্রকল্পের অধীন আপনাকে পরিষেবা দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আশাকরি, আগামীদিনেও এই প্রকল্পের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সামগ্রিক মানোন্নয়নে আরও বেশি করে শামিল হওয়ার সুযোগ পাব।” মুখ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাস পেয়ে স্বাস্থ্যসাথির কার্ডের জন্য রাজধানী থেকে গ্রাম–আমজনতার লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। তবে ২১শের রাজ্য বিধানসভার ভোটও দুয়ারে। ভোটের নির্ঘণ্ট বেজে গেলে সকলের কাছে স্বাস্থ্যসাথির কার্ড সরকার পৌঁছে দিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তবে শাসকদলের অনুগত হলেই তাঁদের কার্ড পেতে যে অসুবিধা হচ্ছে না, তা অনেকেই বলছেন। আর সেলিব্রেটি হলে তো কথাই নেই। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চ থেকে উপস্থিত তারকাদের এবং টেকনিশিয়ানদের মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ–স্বাস্থ্যসাথি কার্ড করিয়ে নিন। সেইসঙ্গে জানান, তিনিও স্বাস্থ্যসাথি কার্ড করেছেন। এই কার্ডে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্যাশলেস চিকিৎসার সুবিধা থাকছে, সেকথাও মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। আসলে তারকারও মানুষ। তাই তাঁদের স্বাস্থ্যসাথি কার্ড পাওয়ার অধিকার আছে। মুখ্যমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী-আমলাও মানুষ, কাজেই তাঁদেরও স্বাস্থ্যসাথি কার্ড পাওয়ার অধিকার আছে। আছে বলেই তাঁরা আবেদন করলেই অনায়াসেই কার্ড পেয়েও যাবেন, যাচ্ছেনও। কিন্তু সাধারণ মানুষের এই কার্ড পেতে কালঘাম ছুটছে। অনেক ক্ষেত্রেই আবেদনপত্র শিবিরে জমা দেওয়ার পর তা হারিয়ে যাচ্ছে। আবার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পরও নাম নথিভুক্তকরণের জন্য ডাকই আসছে না। অনেক ক্ষেত্রেই কার্ড নিয়ে দলবাজিও হচ্ছে বলে অভিযোগ। তাই স্বাস্থ্যসাথির কার্ড নিয়ে স্বজনপোষণের রাজনীতি করতে গিয়ে দুয়ারে সরকারের মূল উদ্দেশ্যটাই শেষ পর্যন্ত ভেস্তে না যায়। এমন কথাও অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কি তা জানেন? ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর তা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কর্ণগোচর করেছেন কিনা, তা তিনিই জানেন। তবে কার্ডের জন্য আবেদন করে সাড়া না মেলায় সমাজের একটা বড় অংশে অসন্তোষ দানা বাঁধছে, যা শাসকদলের কাছে অশনি সংকেত।