রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের সম্পর্ক ঠিক কেমন, তা রাজ্যবাসীর অজনা নয়। অতীতে কয়েকবারই দেখা গিয়েছে, রাজ্যপালের কথায় বেজায় চটেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই আবার রাজ্যপালকে পুষ্পস্তবক দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। আবার অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করলে রাজ্যপালকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। তিনিই আবার অভিমান ভুলে সটান রাজ্যভবনে হাজির হন। শিষ্টাচারের নিদর্শন তুলে ধরে রাজ্যপালের সঙ্গে ‘আড্ডা’ দেন। ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসের সকালে রাজ্যবাসী রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর এমনই অম্লমধুর সম্পর্ক আরও একবার প্রত্যক্ষ করলেন।
প্রথা অনুযায়ী স্বাধীনতা দিবসের দিন বিকালে রাজভবনে রাজ্যপালের চা-চক্রের অনুষ্ঠানে বিশিষ্টরা আমন্ত্রিত থাকেন। চা-চক্রে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু গত একবছর রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের মধ্যে অনেকটা সময় কেটেছে সংঘাতের আবহে। তাই এ বারের চা-চক্রে মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন কিনা, তা নিয়ে জল্পনা ছিলই। কিন্তু শনিবার মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সেই জল্পনায় জল ঢেলে দেন। রেড রোডে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান শেষ করেই মুখ্যমন্ত্রী সটান রাজভবনে চলে আসেন। রাজভবন থেকে বেরিয়ে মমতা বলেন, ‘বিকালে চা-চক্রের অনুষ্ঠানে আসতে পারব না। আমার সঙ্গে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা, স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা, ডিজি বীরেন্দ্র ছিলেন। পাঁচজন মিলে আড্ডা মেরে গেলাম।’’
অথচ, স্বাধীনতা দিবসেও রাজ্যকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তিনি বলেছেন, “হিংসামুক্ত ভোট করে নজির তৈরি করুক রাজ্য।” এর বিরোধিতা করে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেছেন, “উনি বোধহয় বিজেপি শাসিত রাজ্যের কথা বলছেন।” এই আবহে রেড রোডে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের পর সোজা রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ‘আড্ডা’ অর্থবহ। এ কারণেই যে, মমতার এই শিষ্টাচারে গণতন্ত্র মজবুত হবে। হওয়াটাই কাম্য। তবে মুদ্রার উলটো পিঠটি হল, ২১শের বিধানসভার ভোট। এই ভোটই এখন মমতা পাখির চোখ করে লক্ষ্যভেদ করতে চাইছেন। তাই কুশলী মমতা যেমন দল থেকে বিচ্ছিন্নদের, অন্যভাবে বলতে গেলে বিতর্কিতদের ঘরে ফেরাতে মুক্তমনা হয়েছেন, ঠিক তেমননি রাজ্যপালের সঙ্গে সুসস্পর্ক রেখে ভোট বৈতরণি পার হতে চাইছেন। তাই শনিবারের আড্ডায় চিঁড়ে ভিজল কিনা, তা সময়ই বলবে। যদিও শনিবার রাতেই রাজ্যপাল চা-চক্রের অনুষ্ঠানে একটি ফাঁকা চেয়ারের ছবি তুলে টুইট করেছেন, ‘‘এই ফাঁকা চেয়ার মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতির চিহ্ন বহন করছে। এই অনুপস্থিতি মোটেও রাজ্যের ইতিবাচক সংস্কৃতির সৌজন্য বহন করে না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্য সরকারি আধিকারিকদের রাজভবনের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিতি আমাকে অবাক করেছে। স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের এই ভূমিকায় আমি বাকরুদ্ধ।’’