বদলের স্লোগান তুলেই রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছেন তৃণমূল কংগ্রেসনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হয়ে উঠেছেন ‘বাংলার মুখ’ তথা প্রচারের মুখ। কিন্তু এ বার তৃণমূলের প্রচারে লেগেছে বদলের হাওয়া। শুরু হয়েছে মুখবিহীন প্রচার। অবাক করা কাণ্ডই বটে! কারণ, প্রচারের প্রতিটি ক্ষেত্রে যিনি মুখ হয়ে ওঠেন, সেই দলনেত্রী-ই নেই প্রচারে। এমন বদল যে আসতে পারে, করোনা-আবহ তা দেখিয়ে দিল। প্রচারের নাম ‘সোজা বাংলায় বলছি।’
২১শের ভোটই পাখির চোখ। তাই গেরুয়া শিবিরের প্রচারকে ভোঁতা করতে সোশাল মিডিয়ায় তৃণমূলের নতুন এই প্রচারের কাণ্ডারি রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। গত ন’বছরে বাংলায় তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের কাজ ও বিজেপির ‘অপপ্রচার’, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় হস্তক্ষেপের বিষয়গুলি তুলে ধরতেই তিনি প্রচার শুরু করলেন। লক্ষ্যণীয় হল, দলের অনুগত সৈনিক হলেও তাঁর এই প্রচারে নেই নেত্রীর মুখ, নেই দলের প্রতীক। তৃণমূল সূত্রের খবর, আপাতত সপ্তাহে তিনদিন একটি করে এক মিনিটের ভিডিও সোশাল মিডিয়াতে ছাড়া হবে। সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকবেন সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। রবিবার তা দেখাও গেল।
আসলে পরের বছর রাজ্যে বিধানসভা ভোট। করোনা-আবহে দলের বার্তা দিতে বিজেপি ভার্চুয়াল সভার যে পথ দেখিয়েছে, সেই পথেই হাঁটছে তৃণমূল। তাই ২১শের শহিদস্মরণ ভার্চুয়াল হয়ে উঠেছে। মঞ্চ থেকে মমতা ভোটের জন্য তৈরি হতে কর্মীদের বার্তা দিয়েছেন। এর মধ্যে বিজেপির বঙ্গ ব্রিগেড যখন দিল্লিতে বসে ভোটের রণকৌশল ঠিক করছে, তখন শুরু হল তৃণমূলের নয়া প্রচার ‘সোজা বাংলায় বলছি’।
গত লোকসভা ভোটে রাজ্যে আঠারোটি আসনে পদ্ম ফুটেছে। তার পরই দলের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে মরিয়া হয়ে তৃণমূলনেত্রী ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির সূচনা করেন। সেই কর্মসূচির মুখ ‘দিদি’-ই। আবার ‘বাংলার গর্ব মমতা’– প্রচারের মুখও সেই নেত্রী-ই। অথচ, এ বারের প্রচার আক্ষরিক অর্থেই অভিনব। প্রচারের আঙিনায় ‘সোজা বাংলা’য় কে বলছেন, নেত্রী নন, দলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। আসলে হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করে যখন পদ্মশিবির রাজ্যে পাপড়ি মেলছে, তখন বাঙালির আবেগের ‘বাংলা’ ভাষাতেই ভর করে ভোট বৈতরণি পার হতে চাইছে.জোড়াফুল শিবির। তাই ‘বাংলা চালাবে বাঙালিরাই’, বহিরাগতরা নয়–একুশের মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছেন নেত্রী। আর সেটাই প্রচারের ট্যাগ লাইন বলেই কি ডেরেক বলছেন–সোজা বাংলায় বলছি। যা বলছেন, তা কি বাঙালির মন ছুঁয়ে যাচ্ছে? উত্তর দেবে ২১শের ভোট।