করোনা সংকটকালে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, টাস্ক ফোর্স কী করছে?

ছবি–সংগৃহীত

পুলক দেবনাথ

রোনাভাইরাস এবং লকডাউনের জাঁতাকলে মানুষের দুর্দশা বেড়েছে। অনেকের হাতে কাজ নেই। বহু কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। যাঁদের চাকরি আছে, তাঁদের অনেকেরই বেতনে কাটছাঁট করা হয়েছে। মানুষের এমন একটা কঠিন অবস্থায় রোজ প্রায় পালা করে বাজারে জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। এমনিতেই করোনার ঠেলায় গৃহস্থের জীবন জেরবার, তার উপর নিত্য বাজারে গিয়ে মূল্যবৃদ্ধির নির্মম ছ্যাঁকা খাওয়া। মানুষ দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকবে কী করে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    হ্যাঁ, রেশনে এখন বিনাপয়সায় চাল, আটা মিলছে। কিন্তু তার মান নিয়ে মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই। তবুও রেশন দোকানগুলিতে নিরুপায় মানুষের লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। মান যাই হোক, বিনা পয়সায় তো মিলছে। মানুষের অবস্থা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে, এই ঘটনাতেও তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। কিন্তু শুধু চাল ফুটিয়ে ভাত খেলেই তো হবে না। সঙ্গে একটু ডাল, তরিতরকারি তো চাই। এ জন্য চাই সরষের তেল, মশলাপাতি ইত্যাদি। কিন্তু সেসবের দাম আগুন। নিয়মিত মাছ-মাংস খাওয়া এখন নিম্নবিত্তদের কাছে বিলাসিতার শামিল।

    এক আমফান ঝড়ের দোহাই দিয়ে রোজ সবজির দাম কিছু না কিছু বাড়ছে। কিলো প্রতি করলা ৬০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, টম্যাটো ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, কাঁচা আম ১০০ টাকা, সজনে ডাঁটা ১২০ টাকা, ঝিঙে ৪০ থেকে ৫০ টাকা ইত্যাদি। কিন্তু আমফান ঝড়ের অনেক আগেই তো আলু মাঠ থেকে উঠে গিয়েছে। তাহলে তার দাম  এত চড়চড়িয়ে বাড়ছে কেন? জ্যোতি আলু এখনই ৩০ টাকা কেজি। পুজোর সময় কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কে জানে! কেবল পেঁয়াজটাই এখনও পর্যন্ত ঠান্ডা আছে। সবাই যে রেশনের চাল খাচ্ছেন, তা তো নয়। খোলাবাজারে ভালো মানের চালের দামও চড়া। মাছ-মাংসের দামও চড়েছে। বিশেষত পাঁঠার মাংসের দাম।

  পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রথমে কনটেনমেন্ট জোনের পরিধি বাড়িয়ে লকডাউন হচ্ছিল। এখন থেকে সপ্তাহে দু’দিন করে সম্পূর্ণ লকডাউন হবে। ফলে আবার অর্থনীতির চাকা শ্লথ হতে বাধ্য। 

    করোনাকালে সাধারণ মানুষের আর্থিক দুর্দশা যে বেড়েছে, তা নিশ্চয় সরকার বাহাদুর অস্বীকার করবে না। যে কারণে সরকার নানা ধরনের প্যাকেজ বা অনুদান সামনে আনছে। কিন্তু তাতে মানুষের কষ্ট সত্যিই কতটা লাঘব হচ্ছে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। এই কঠিন সময়ে সরকারের দু’টি বড় কাজ হল, মানুষের রোজগার সুনিশ্চিত করা এবং জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধিতে লাগাম পরানো। দুঃখের বিষয়, দু’টি ক্ষেত্রেই মানুষ এখনও পর্যন্ত কোনও আশার আলো দেখতে পায়নি। লকডাউনের পর আনলক পর্ব শুরু হওয়ার সুবাদে কর্মক্ষেত্রগুলির দরজা খুলছিল। কিন্তু তাতে করোনা সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রথমে কনটেনমেন্ট জোনের পরিধি বাড়িয়ে লকডাউন হচ্ছিল। এখন থেকে সপ্তাহে দু’দিন করে সম্পূর্ণ লকডাউন হবে। ফলে আবার অর্থনীতির চাকা শ্লথ হতে বাধ্য।

    এই অবস্থায় সরকার জিনিসপত্রের মূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। তাতে সাধারণ মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতে পারে। কিন্তু তা হচ্ছে কৈ? সরকার নিয়ন্ত্রিত টাস্ক ফোর্স তো আছে। তাদের তো কোনও নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে না। এই মওকায় ফড়ে এবং বাজারের দোকানিরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে চলেছে। নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ গৃহস্থের। সাপ্লাই চেন ঠিক থাকা সত্ত্বেও কেন জিনিসপত্রের দাম বেলাগাম হবে? বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে কি? মজুতদারি চলছে না তো? টাস্ক ফোর্স এ সব দেখবে না? আর কালবিলম্ব না করে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম পরাতে সরকারের এখনই সচেষ্ট হওয়া উচিত।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here