তাঁর আগুনঝরা বক্তৃতায় কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের যে আবেগের বিস্ফোরণ হয়, তা ভার্চুয়ালি কি ছুঁতে পারলেন নেত্রী? উত্তর দেবে ভোটের বাক্স। তাই আগামী বিধানসভার ভোটকেই পাখির চোখ করেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মানবিকতার ভোট চাইছেন।
২১শের মঞ্চ থেকে এ বার মমতা বলেছেন, ‘আমফান ও করোনা পরিস্থিতির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকে অপমানিত করেছে বাম ও বিজেপি। ২১শের নির্বাচনে এর বদলা নেব। বদলা হবে মানবিকতার জয় দিয়ে।’ আত্মবিশ্বাসী নেত্রী আরও বলেছেন, মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে তিনি ২০২১ সালের জুলাইয়ে সব চেয়ে বড় সমাবেশ করবেন। সেইমতো তাঁর নিদান, দলীয় কর্মীদের ভোটের লড়াইয়ের জন্য এখন থেকেই তৈরি হতে হবে। এ জন্য তিনি দলে ব্যাপক রদবদলও করেছেন। এ ক্ষেত্রে তরুণ রক্তেই ভরসা রাখেন মমতা। আসলে তিনি বাংলার নবযৌবনকে নিয়ে চলতে চান।
তাই ২০১৬ সালে ২১শের মঞ্চ থেকেও তাঁদের উদ্দেশে নেত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘আমি আপনাদের পাহারাদার।’ তাঁদের মধ্যে অনেকেই মেধার জোরে বাংলা ছেড়ে ভিন রাজ্যে অথবা বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। সেখানে তাঁরা কেউ পড়ুয়া, কেউ গবেষক, আবার কেউ চাকরি করছেন। কিন্তু ভিসা থেকে সেখানকার কর্মসংস্কৃতি–অনেক কিছুতেই তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। তাই অনেকেই ঘরে ফিরতে চান। অবশ্য ভুক্তভোগীরা জানেন, চাইলেও তাঁরা নিজের রাজ্য বাংলায় ফিরতে পারছেন না। তা হলে কি তাঁদের ফেরাতে রাজ্যের কোনও সদর্থক ভূমিকা বা পরিকল্পনা নেই? যদি থেকেই থাকে, তা হলে রাজ্য সরকার তাঁদের ঘরে ফেরাতে পারছে না কেন? বিদেশ থেকে মোটা টাকা খরচ করে রাজ্যের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির জন্য তাঁরা ইন্টারভিউ দিতে এলেও বোর্ডের মূল্যায়নে তাঁদের ঠাঁই হচ্ছে না বললেই চলে। এমন দৃষ্টান্তের অভাব নেই। কখনও-সখনও তাঁদের মূল্যায়ন নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে, তথ্য জানার অধিকার প্রহসনে পরিণত হয়। রাজ্যপাল থেকে আদালত পর্যন্ত গড়ালেও অনেক সময় বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে।
যদিও বর্তমান রাজ্যপাল জগদীশ ধনখড় রাখঢাক না করেই বলেছেন, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ‘রাজনৈতিক খাঁচাবন্দি’। বামফ্রন্ট আমলে এমনটি টের পেয়েছেন কর্মপ্রার্থীরা। এখন রাজ্যপালের মন্তব্যকে মমতা ‘বাড়াবাড়ি’ বলে দাবি করলেও শুধু রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নয়, আমফান দুর্নীতি, করোনাভাইরাস মোকাবিলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরব রাজ্যপাল। তিনি দিল্লিতে গিয়ে এ সব নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে নালিশও ঠুকেছেন। বসে নেই বিজেপির বঙ্গ ব্রিগেড। তারাও দলের দিল্লির নেতাদের সঙ্গে বসে আগামী ভোটের রণকৌশল ঠিক করছেন। বাম-কংগ্রেস একজোট হয়ে তৃণমূল ও বিজেপি দলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শান দিচ্ছে। কিন্তু মমতার ঘোষণা, ‘গুজরাত বাংলাকে শাসন করবে না। বাংলা শাসন করবে বাংলার মানুষ।’ তাতে বাংলার বাইরে থাকা মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা যাঁরা প্রকৃতই ঘরে ফিরতে চান, তাঁদের ইচ্ছাপূরণ হবে কি? তাঁরা কি গলা চড়িয়ে বলতে পারবেন, ‘দিদি সত্যিই আমাদের পাহারাদার’?