সামনেই রাজ্য বিধানসভার ভোট। আর এই ভোটকে পাখির চোখ করে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করছে বিরোধীরা। আমফান বিপর্যয়ে ত্রাণ বণ্টনে রাজ্যের শাসকদলের নেতারাই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ বিজেপি, বাম ও কংগ্রেসের। দুর্নীতি নিয়ে সরব রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। কোথাও কোথাও সংঘর্ষ পর্যন্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় ড্যামেজ কন্টোলে নেমেছেন তৃণমূল কংগ্রেসে সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ এলেই তিনি কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানিয়েছেন, দলনেত্রীর আদেশ মেনে ত্রাণ নিয়ে গাফিলতি ও গরমিলের অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র তবসুম আরা ও তিন কাউন্সিলর বেবি খাতুন, শংকর চক্রবর্তী ও প্রভাব চট্টোপাধ্যায়কে। আবার রাজ্যের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুরের বিধায়ক শ্যাম মুখোপাধ্যায়কে শোকজ করেছে তৃণমূল। একই অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে বাঁকুড়ার আরও দুই দলীয় নেতাকে। যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাঁকুড়া জেলার দলীয় নেতৃত্বের ভার্চুয়াল বৈঠকের পরই এই পদক্ষেপ করা হয়। এ ছাড়াও তালডাংরা ও পাত্রসায়র ব্লক সভাপতিদের কার্যকলাপও তৃণমূল নেতৃত্বের নজরদারিতে রয়েছে। যদিও শোকজ নোটিশ পেয়ে কোনও নেতাই তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা ত্রাণ-দুর্নীতির অভিযোগ মানতে নারাজ।
জোড়া-ফুল শিবিরের এই পদক্ষেপকে ‘লোক দেখানো’ বলে কটাক্ষ করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘‘এই ধরনের দুর্নীতি একমাত্র তৃণমূলের পক্ষেই সম্ভব। ত্রাণ দুর্নীতি নিয়ে একটা পদক্ষেপ নজরে পড়ল। এর আগে রেশন-দুর্নীতি নিয়ে প্রচুর অভিযোগ থাকলেও খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তাই পুরোটাই আইওয়াশ।’’ দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে কটা অভিযোগ পুলিশে দায়ের হয়েছে, প্রশ্ন দিলীপ ঘোষের। পাশাপাশি মমতা সরকারকে নিশানা করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। ত্রাণ বণ্টনের ক্ষেত্রে রাজনীতি না করে স্বচ্ছতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ত্রাণ দুর্নীতিতে জড়িত আমলাদের বিরুদ্ধেও রাজ্যপাল কড়া শাস্তির দাবি তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়ে দেন, দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি নেবে। দলকেও একই পদক্ষেপের নির্দেশ দেন তিনি। তারপরই তৃণমূলের তরফে দলীয় নেতাদের তড়িঘড়ি শোকজ পদক্ষেপ করা শুরু হয়। আসলে অসুখটা করোনার মতোই অনেক গভীরে। তার সংক্রমণ পরিবর্তনের জমানার আগেই শুরু হয়েছিল। বামফ্রন্ট আমলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ত্রাণ বিলিতে দুর্নীতি নিয়ে কম বিক্ষোভ হয়নি। পরিবর্তনের জমানাতেও তার অন্যথা হচ্ছে না। সমাজের রন্ধে রন্ধে দুর্নীতির যে ভাইরাস বাসা বেঁধেছে, তার প্রতিশেধক দলের ‘শুদ্ধিকরণ’ কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বামশাসনে রাজ্যে সিপিএমকেও শুদ্ধিকরণের পথে হাঁটতে হয়েছে। তাতেও নিজেদের পতন আটকাতে পারেনি সিপিএম তথা বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। সেই সময়ের বেনোজল তৃণমূলে ঢুকেছে। কাজেই এখন দেখার বেনোজল সরাতে তৃণমূলের ‘শুদ্ধিকরণ’ সত্যি-ই লোকদেখানো কিনা। আর তার ভবিষ্যৎ-ই বা কী ?