সুস্থতার জন্য যোগের কোনও বিকল্প নেই

আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ঘরে বসেই পালন করুন। তার আগে কেন যোগাভ্যাস দরকার, তা জানাচ্ছেন সুচেতনা বন্দ্যোপাধ্যায়

০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসংঘে ভাষণ দেওয়ার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২১ জুন তারিখটিকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস বলে ঘোষণা করার প্রস্তাব দেন। সেই বছরই ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ ২১ জুন তারিখটিকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। এই দিনটিতে যোগব্যায়ামের গুরুত্ব এবং তার স্বাস্থ্য উপকারিতাকে চিহ্নিত করা হয়। প্রতি বছর আলাদা থিম থাকে আর বিশ্বজুড়ে নানান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করা হয়। এ বছর করোনার মতো অতিমারির জন্য আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের থিম হল ‘Yoga at home and Yoga with family’.  অর্থাৎ ঘরে বসে পরিবারের সঙ্গে যোগাসন করুন।

তার আগে জেনে নিন সুস্থ থাকতে যোগাসন কেন জরুরি?

    আসলে সকলের সঙ্গে একাত্ববোধ ও শান্তি স্থাপনের একমাত্র মাধ্যম হল যোগ। এর মাধ্যমে সুস্থভাবে বাঁচার কৌশল রপ্ত করা যায়। যোগ শব্দটি এসেছে সংস্কৃতের ‘যুজ’ থেকে, যার অর্থ যোগ দেওয়া বা একত্রিত হওয়া। যোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অভ্যাসের ফলে ব্যক্তির নিজের সচেতনতা বোধ বাড়ে। সেইসঙ্গে তার সার্বিক সচেতনতা বোধ-ও বাড়ে। আধুনিক বিজ্ঞানীদের মতে, বিশ্বের সব কিছু একই বিষয়ের বহিঃপ্রকাশ। সব কিছুর ঐক্য যার ভিতর দেখতে পাওয়া যায়, তাই হল যোগ। আর যিনি মানসিকভাবে স্বাধীনতা পান তিনি মুক্তি, নির্বাণ, কৈবল্য বা মোক্ষ লাভ করেছেন ধরে নেওয়া হয়।

    যোগ হল, মানুষের মধ্যের বিজ্ঞান, নানারকম পদ্ধতির মধ্য দিয়ে মানুষের দেহ ও মনের বন্ধনের অনুভব। আত্মানুভূতি। এই যোগাভ্যাসের উদ্দেশ্য হল, যে কোনওরকম শরীর ও মনের সমস্যা থেকে মুক্তিলাভ করে এক ঐশ্বরিক সুখীভাবের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

    সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও সুস্থ থাকার জন্য যে যে যোগাভ্যাস দরকার এবং তার মধ্যে যে সব যোগ বেশি অনুশীলন করা দরকার তা হল, যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণ, ধ্যান, সমাধি, বাঁধা ও মুদ্রা, সৎকর্ম, মন্ত্র-জপ, যুক্ত কর্ম ইত্যাদি।

    যম আর নিয়ম হল, যে কোনও যোগ অনুশীলনের প্রাথমিক কাজ। কুর‍্যাত তদ আসনম স্থৈরম অর্থাৎ শরীর ও মনের বন্ধন দৃঢ় করে আসন। শারীরিক গঠন সুন্দর রাখে ও দীর্ঘজীবী হতে সাহায্য করে।

    প্রাণায়াম হল, শ্বাসযন্ত্রের ব্যায়াম। এর সাহায্যে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব।  প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতন ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হয়। পরে শ্বাস নিয়ে নানাভাবে ব্যবহার করতে হয়। যা যোগশাস্ত্রে পূরক, কুম্ভক, রেচক ইত্যাদি নামে পরিচিত।

    প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজের বাইরে গিয়ে অন্য বাইরের বস্তুর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে।

    ধারণ হল, শরীর ও মনের উপর পুরো নিয়ন্ত্রণ রাখা। ধ্যানের সাহায্যে শরীর ও মন শান্ত হয়। মানুষ নিজেকে অনুধাবন করতে পারে। যোগ সাধনায় পৌঁছতে পারে।

    বাঁধা বা বন্ধ ও মুদ্রা প্রাণায়ামের সঙ্গে যুক্ত। শ্বাসযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ভঙ্গীতে এর ব্যবহার হয়।

    সৎকর্ম হল, শরীরের ডিটক্সিফিকেশন। শরীরকে ক্লেদ মুক্ত করা যায় এর সাহায্যে। যুক্ত কর্ম হল, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সঠিক খাবার খাওয়া ও জীবনযাপন করা। আর সমাধিতে ব্যক্তির চেতনা মহাজাগতিক চেতনার সঙ্গে এক হয়ে যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here