জানাচ্ছেন সুচেতনা বন্দ্যোপাধ্যায়
বিয়ে বা প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়া কিংবা নিজের পছন্দের মেয়েটির অন্য পুরুষের (সে বন্ধু হলেও) সঙ্গে হেসে কথা বলা মানতে না পারলেই তাঁর চেহারা বিকৃত করে দেওয়ার বিকৃত মানসিকতার প্রকাশ হল অ্যাসিড ছুঁড়ে মারা। এমন অজস্র মেয়ে এই বিকৃত মানসিকতার শিকার। সুন্দরবন থেকে শিলিগুড়ি, মায় গোটা দেশের সব জায়গার এক ছবি। আর সবচেযে বড় সমস্যা হল, যারা এ ধরনের ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের দিকে নয়, যাঁরা আক্রান্ত, তাঁদের দিকেই বারবার আঙুল ওঠে। নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় অহরহ। এমন একটি বিষয় নিয়ে মেঘনা গুলজার পরিচালিত ছবি ছপাক মুক্তি পেল কয়েকদিন আগে।
বাণিজ্যিক সাফল্য কতটা পেল, সেদিকে না গিয়ে বলা যায়, এমন একটা ছবির সত্যিই খুব দরকার ছিল। আমার দেশের বহু মেয়ে এখনও অন্যের অপরাধের বোঝা বয়ে নিযে যায় আজীবন। একথা আমরা সবাই জেনে গিয়েছি, লক্ষ্মী আগরওয়াল নামে একজন অ্যাসিড আক্রান্তের জীবনী নিয়ে এই ছবি। আর এ রকম একটা গ্ল্যামারহীন চরিত্রে অভিনয় করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি দীপিকা পাড়ুকোন। শুধু তাই নয়, এই ছবির প্রযোজকের ভূমিকাতেও এই বলিউড অভিনেত্রী। ছবিতে একদিকে আছে লড়াই, অন্যদিকে সাহসিকতা।
এক সাক্ষাৎকারে লক্ষ্মী আগরওয়াল জানিয়েছেন, যিনি তাঁর দিকে অ্যাসিড ছুড়েছেন, তিনি একবার অপরাধ করেছেন। আর বারবার এই বিষয় নিয়ে তাঁকে যারা প্রশ্ন করেছেন, তাঁদের অপরাধও কম নয়। ছবিতে তাঁর চরিত্রের নাম বদলে রাখা হয়েছে মালতী। তাঁর স্বপ্ন ছিল গায়িকা হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। মালতীকে পছন্দ বাব্বু নামে একজনের। যদিও মালতীর তাঁকে পছন্দ নয়। একদিন বাব্বু অন্য একটি ছেলের সঙ্গে মালতীকে কথা বলতে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারে না। মালতীকে যাতে কেউ না পায়, তাই তাঁর মুখ বিকৃত করে দেওয়ার জন্য অ্যাসিড হামলা চালায়। দিনের বেলায় লোকজনের মধ্যে এই জঘন্য কাজ করলেও কেউ তাকে বাধা দেয়নি। দিব্যি সে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
এরপর জটিল চিকিত্সার মাধ্যমে, কয়েকবার অস্ত্রোপচারের পর মালতী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। তবে শারীরিকভাবে সক্ষম হলেও তাঁর আসিডে ঝলসে যাওয়া মুখের জন্য নানা জাযগায় নানারকম প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, যা কোনওভাবেই অভিপ্রেত নয়। তবে তাঁর সুস্থ হওয়ার মধ্যেই পরিবারে ঘটতে থাকে একের পর এক দুর্ঘটনা। যে বাড়িতে থাকতেন, সেই বাড়ির কর্ত্রী আইনজীবী নিয়োগ করেন মালতীর তরফে।
বিচারে দোষীর শাস্তি হয়। এরপর অ্যাসিড বিক্রির ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার লড়াই চালিয়ে তাতেও সাফল্য পান লক্ষ্মী বা এই গল্পের মালতী। পরিচালক জীবনী আকারেই এই ছবি বানিয়েছেন বলে কোথাও কোনও অতিনাটকীয়তা করেননি। এ জন্য অবশ্যই তাঁর প্রশংসা প্রাপ্য। ছবিতে যে ভাবে অ্যাসিড আক্রান্তকে বিভিন্ন জায়গায় অপদস্থ করার ঘটনা উঠে এসেছে, তা বাস্তব বলে মানতে কোনও সমস্যা হয় না। ছবিতে এও জানানো হয়েছে, এই অ্যাসিড আক্রান্তের ঘটনা আন্দোলন সত্ত্বেও বেড়েছে বই কমেনি। এখনও খোলা বাজারে যে কেউ যে কোনও সময়ে অ্যাসিড কিনতে পারে। যতদিন না এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হবে, ততদিন মাঝে-মধ্যেই ছপাক শব্দ থেকে আমাদের কান রেহাই পাবে বলে মনে হয় না।