বিশেষ করে শীতকালে কম-বেশি আমরা সবাই খুশকির সমস্যার ভুক্তভোগী। অনেক সময়ে লোকের মাঝখানে এই খুশকির জন্য অস্বস্তিতেও পড়তে হয়। আসলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর মাথার ত্বকে নতুন কোষ তৈরি হয় ও পুরোনো কোষ ঝরে পড়ে। যখন এই প্রক্রিযা ঠিকমতো হয় না, তখনই খুশকির উপদ্রব শুরু হয়। অর্থাত্ যদি পুরোনো কোষ না ঝরে সেগুলো মাথার মধ্যেই জমে থাকে এবং তাতে ছত্রাকজনিত সংক্রমণ দেখা দেয়। সেই কোষগুলোকেই খুশকি বলা হয়। সময়ে ঠিকমতো স্নান না করা বা চুল অপরিষ্কার থাকা এর উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ। কাজেই চুল পরিষ্কার রাখা খুশকি থেকে দূরে থাকার প্রধান উপায়। যদিও কিছু কিছু শারীরিক কারণও এর জন্য দায়ী। শরীরে যদি ভিটামিন বি, জিংক ও কিছু ফ্যাট কম থাকে, তা হলেও খুশকি হতে পারে। মাথা ছাড়াও অনেক সময ভ্রুতে, নাকের কোণায়, এমনকী কানের পিছনেও খুশকি হতে পারে। এই সংক্রমণ থেকে কখনও কখনও ব্রণও হয়।
তাই চুলের বিশেষ যত্নের দরকার। ঠিকমতো চুল আঁচড়ানো, শ্যাম্পু করা–এ সব দিকে নজর দিতেই হবে। তাই খুশকি থেকে দূরে থাকতে হলে মাথা পরিষ্কার করার আগে প্রতিবার ভালো করে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নেওযা দরকার। এতে খুশকি ঝরে যাওযার পর শ্যাম্পু করলে চুলের গোড়া ভালোভাবে পরিষ্কার হযে যায়। আর যাদের মাথার তালু শুকনো ধরনের, তাঁদের নিয়মিত হালকা শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা দরকার। কিছু কিছু চুলে মাখার উপাদান থেকেও খুশকির সমস্যা বাড়তে পারে। কাজেই যে কোনও শ্যাম্পু বা তেল ব্যবহার না করাই ভালো। খুশকি দূর করার জন্য কেটাকোনোজল জাতীয় উপাদানযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। টিট্রি অয়েলও খুশকির দাওয়াই হিসেবে দারুণ কাজ করে। কারণ, এর অ্যান্টিসেপটিক উপাদান সংক্রমণ থেকে দূরে রাখে। ফলে খুশকি থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
খুশকি দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়
এক মুঠো নিমপাতা জলে ফুটিযে ঠান্ডা করে চুলের গোড়া থেকে ভালো করে ধুয়ে নিলে খুশকি দূর হবে। নারকেল তেল আর পাতিলেবুর রস, ২ চামচ করে নিয়ে তাতে ১০ ফোটা টিট্রি অয়েল ও ল্যাভন্ডার অয়েল কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে নিতে হবে। ওই তেল স্ক্যাল্পে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে ধুয়ে নিলে খুশকি দূর হবে। সপ্তাহে তিনদিন করে লাগানোই যথেষ্ট। মেথি জলে ভিজিয়ে রেখে নরম হলে তা বেটে টক দই মিশিয়ে একটা প্যাক বানাতে হবে। মাথায় ভালো করে নারকেল তেল মেখে তারপর ওই প্যাক চুলের গোড়া থেকে আগা সব জায়গায় লাগাতে হবে। আধ ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট রেখে তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে। তিল তেল, ক্যাস্টর অয়েল, নারকেল তেল সমপরিমাণে নিয়ে তার সঙ্গে ১০ ফোঁটা টিট্রি অয়েল দিয়ে আঙুলের সাহায্যে চুলের গোড়ায় ভালো করে ম্যাসাজ করতে হবে। ঘণ্টাখানেক পর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেললেই খুশকি থেকে রেহাই মিলবে। আপেল সিডার ভিনিগার ২ চামচ, ২ চামচ জল আর ২০ ফোঁটা টিট্রি অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পরে শ্যাম্পু করলেও খুশকি দূর হয়। এক কাপ জলের মধ্যে এক টেবল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে বোতলে ভরে ভাল করে ঝাঁকিয়ে শ্যাম্পু বানিয়ে নিন। যত দিন খুশকির সমস্যা থাকে, এই শ্যাম্পুই ব্যবহার করুন।