রবীন্দ্রভারতীতে রবীন্দ্রদূষণ

সফিউন্নিসা

২০২০-র বসন্ত উৎসব নতুন এক বিকৃত ব্যাধির জন্ম দিয়েছে। ঘটনাস্থল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়আর, কোনও ব্যাধিকে সমাজের একশ্রেণির মানুষের এমনভাবে গ্রহণ করার ক্ষতিকর দৃষ্টান্ত এর আগে দেখা যায়নি। যখন সামাজিক এক ভয়ংকর অবক্ষয়ের মধ্যে দিয়ে আমরা চলতে বাধ্য হচ্ছি, যুব সমাজের সামনে কোনও দিশা নেই, অত্যন্ত সুকৌশলে যখন তাদের সমস্তরকম স্বাভাবিক যুক্তি, চিন্তা, চেতনা থেকে দূরে সরিয়ে রেখে আত্মধ্বংসী গহ্বরের দিকে ঠেলে দেওয়ার ভয়ংকর প্রয়াস চলছে, তখন কিছু স্বঘোষিত ‘আঁতেল’ সবকিছু ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করার খেলায় নেমেছে।

খেউড় যদি এখনকার প্রজন্মের ‘লবজ’ হয়ে ওঠে, সেটাকে সমর্থন করতে হবে?  রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যা ইচ্ছা করার স্বাধীনতা, কপিরাইট উঠে যাওয়ার ছুতো ধরে রবীন্দ্র কবিতা, সংগীত নিয়ে যা ইচ্ছা প্যারডি করা কোন সংস্কৃতির জন্ম দিচ্ছে ? ভাবতে অবাক লাগে আধুনিক মেয়েদের কথা ভাবলে। তারা তথাকথিত শিক্ষিত হয়, পোশাকে সংস্কারমুক্ত হয়, ইংরেজি বুলিতে দড় হয়, সিগারেটে আর মদ্যপানে প্রতিযোগিতায় নামার হিম্মত রাখে, আবার বিয়ের সময় পণ-যৌতুক দিয়ে বেনারসী আর গয়নায় নিজেকে একটা পুঁটলি বানিয়ে দিব্যি সনাতন নারীর ভেক ধরে। এই দ্বিচারিতা তাদের মজ্জাগত হয়ে উঠছে। এরই আর একটা নতুন দিক এ বার প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে ঘাড়ের খোলা অংশে ছেলেদের দিয়ে ‘খিস্তি’ লিখিয়ে নেওয়া। অন্তত চাপের মুখে পড়ে তাদের এটাই দাবি ছিল, তারা নাকি জানতোই না ওরা কী লিখেছে। এ সেই বোকা মেয়েদের চিরাচরিত ন্যাকামি।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রবীন্দ্রসংগীতের নামে যে গানগুলি তারা সমবেতভাবে গেয়েছিল, সেগুলির মানেই তারা বোঝেনি, এমন দাবি এরপর হয়তো উচ্চারিত হবে তাদের মুখে। যে শব্দগুলি অত্যন্ত অসভ্য পুরুষেরা কথার মাত্রা হিসাবে ব্যবহার করে, যা শোনা যায় অপসংস্কৃতিপুষ্ট নিম্নরুচির মানুষের মুখে, তাই-ই কত অনায়াসে আজকের মেয়েরা সমবেতভাবে গেয়ে কী প্রমাণ করতে চাইল?

মেয়েদের নিজস্ব কিছু শিষ্টতাবোধ থাকে। থাকে কিছু ডিগনিটিবোধ। তারা আধুনিকতা দেখাতে গিয়ে এতটাই দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে যে, তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য করে তুলেছে পুরুষ হয়ে ওঠাকে। এটাকেই কি তারা নারীপ্রগতি ভাবছে? তা হলে তো অপ্রিয় সত্যটা উচ্চারণ করতেই হয়, আগামী হাজার বছরেও নারীমুক্তি আসবে না। কেননা নারী কীসের থেকে মুক্তি চায়, সেটাই সে জানে না। অর্গলমুক্ত ভাষা আর স্বল্পতম বসন নারীমুক্তির পথ হতে পারে না, এটা জেনে রাখাই ভালো।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here