লজ্জা!

প্রতীকী ছবি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সিপিএম নেতার স্ত্রী চাকরি পাচ্ছেন, তা নিয়ে এখন সরগরম কেরালার রাজ্য-রাজনীতি। আসলে এই নিয়োগ ‘রাজনৈতিক’ বলে দাবি করেছেন এখানকার রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। তিনি কেরালার কান্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের  আচার্য। খোদ রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়ালম বিভাগে সহকারী অধ্যাপিকা পদে প্রিয়া ভার্গিসের নিয়োগে আপত্তি তুলেছেন।  কারণ, তাঁর স্বামী কে কে রাগেশ এক জন সিপিএম নেতা। স্ত্রীর চাকরি পাওয়াকে ‘স্বজনপোষণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন রাজ্যপাল। তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট থেকে কেরালার সিপিএম পার্টি সরব হয়েছে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

    শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি পশ্চিমবঙ্গে এখন আর ধামাচাপা নেই। বামশাসিত কেরালাও ব্যতিক্রমী নয়। রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘আইন ভাঙাই এখানে নিয়ম হয়ে উঠেছে।’’ গোটা বিষয়টিকে রাজনৈতিক বলে আখ্যা দিয়ে রাজ্যপালের অভিযোগ, প্রিয়া মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের ব্যক্তিগত সচিবের স্ত্রী বলেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। তাই তিনি নিয়োগের উপর স্থগিতাদেশ  দিয়েছেন। রাজ্যপালের এই নির্দেশকে ‘বেআইনি’ বলে দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হাই কোর্টে যাবে বলে জানিয়েছে। তাতে অবশ্য বিচলিত নন রাজ্যপাল। তাঁর কথায়, যে কেউ তাঁর সিদ্ধান্তকে হাই কোর্টে চ্যালেঞ্জ করতেই পারে। সেইমতো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আইনি পরামর্শ নিয়েছেন। তাঁর দফতর সূত্রের খবর, নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়ার আগে রাজ্যপালের উচিত ছিল উপাচার্যকে শোকজ করা। তা করা হয়নি। কাজেই রাজ্যপালের শিক্ষক নিয়োগের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া বেআইনি। ইতিমধ্যে, কান্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছে ‘বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাও’ কমিটি। তাদের  তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, যোগ্যতার মাপকাঠিতে চাকরি পেতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বিধি অনুযায়ী প্রার্থীর আট বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকা দরকার। যা প্রিয়ার ক্ষেত্রে নেই। আর এ নিয়েই হাই কোর্টে দ্বারস্থ হয়েছেন জনৈক চাকরিপ্রার্থী। শুধু কান্নুরে নয়, কেরালার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিপিএম নেতাদের পরিবারের লোকদের চাকরি নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন শাসকবিরোধী নেতা ভি ডি সাথিশান।

    সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারির মেয়েকে চাকরি খোয়াতে হয়েছে। মন্ত্রী প্রভাব খাটিয়ে যোগ্যদের টপকে নিজের মেয়েকে চাকরি করে দেন। হাই কোর্টের নির্দেশে সেই পদে মন্ত্রীর মেয়ের জায়গায় যোগ্য প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন। মন্ত্রীকন্যা যত দিন চাকরি করেছেন, সেই টাকাও ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট।

    নিয়োগ-দুর্নীতির জালে জড়িয়ে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) শুধু তাঁকে গ্রেফতার করেনি, গ্রেফতার হয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। তল্লাসিতে ইডি পঞ্চাশ কোটিরও বেশি টাকা উদ্ধার করেছে। তল্লাসিতে উঠে এসেছে বিপুল অঙ্কের টাকার বেনামী সম্পত্তির দলিল, প্রচুর সোনা-রুপোর গয়না এবং বিদেশি মুদ্রা। এই পরিস্থিতিতে প্রথমে মন্ত্রীর পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে সরে এসেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। সেইমতো দল মন্ত্রীকে বহিষ্কার করেছে। পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চনা নতুন কিছু নয়। বামশাসনে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপোষণের বিস্তর নজির রয়েছে। রাতের অন্ধকারে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরির নিয়োগপত্র বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ঘটনা দেখেছেন নদিয়ার বাসিন্দারা। কিন্তু বদলের রাজত্বেও যে নিয়োগ-দুর্নীতি থেমে নেই, তা রাজ্যবাসী দেখছেন। লজ্জায় তাঁরা মুখ ঢাকছেন। মনে মনে তাঁরা ফের বদলের ভাবনা ভাবতেও পারেন। রাজ্যের শাসকবিরোধীরা সেই ভাবনাকে উসকেও দিচ্ছেন। কিন্তু লঙ্কায় যে যায়, সেই হয় রাবণ–তাই পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি কেরালার শিক্ষিতরা লজ্জিত। কে দূর করবে তাঁদের এই লজ্জা! বঙ্গের শাসকদল অবশ্য ক্ষমতায় টিকে থাকতে তাঁদের সামনে তুলে ধরতে চায় এক ‘নতুন তৃণমূল’। সেই তৃণমূল সত্যি-ই কি পারবে দুয়ারে লজ্জাকে সরিয়ে নতুনকে তুলে ধরতে। তা অবশ্য সময়-ই বলবে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here