তিনি ছিলেন রাজমিস্ত্রি। কালক্রমে হয়ে ওঠেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। রামপুরহাট গণহত্যা-কাণ্ডে তিনিই নাকি মূল অভিযুক্ত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিতেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি গ্রেফতার হন। যা নিয়ে বিরোধীরা সরব হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে তাঁদের অভিযোগ, পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ আর নতুন কী? রাজ্যে সরকারের পালাবদলের আগেও মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেখেছেন রাজ্যবাসী। পালাবদলের পরও তার অন্যথা হয়নি। পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীর হাতের পুতুল। বলছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, রামপুরহাট গণহত্যায় মূল অভিযুক্ত আনারুল শেখের গ্রেফতারি মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা মাত্র। বিজেপির সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেবেন, তার পর পুলিশ গ্রেফতার করবে? আসলে পুলিশ অকম্মা হয়ে গিয়েছে। একই সুরে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেন সিপিআই(এম) দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর কথায়, কে গ্রেফতার হবে, বা হবে না, তা আইন মেনে ঠিক হবে না। ঠিক হবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে। আবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরি বলেছেন, বাগটুই গ্রামের লোককে মুখ্যমন্ত্রী দেখালেন, তিনি এলেন আর ধরিয়ে দিলেন। এ নিয়ে চাপান-উতোর চলতেই থাকবে। তবে পুলিশ চাইলে অভিযুক্ত যে দলেরই হোক না কেন, তাকে ধরতে যে বেশি সময় লাগে না, তা রামপুরহাট-কাণ্ডে পুলিশ দেখিয়ে দিল।
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। পুলিশমন্ত্রীও তিনি। ছেলে চন্দন বসুর ব্রিফকেস হারিয়ে গেল। ছেলে বাবাকে জানাতেই পুলিশকে ফরমান। কয়েকঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ অভিযুক্তকে ধরেও ফেলল। উদ্ধার হল ছেলের ব্রিফকেস। এ ভাবেই পুলিশ যে পারে, তা আরও একবার রামপুরহাট-কাণ্ডে রাজ্যের মানুষের সামনে এল। দিন কয়েক আগে রামপুরহাটে তৃণমূল কংগ্রেসের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন, পরপর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া এবং বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনায় আনারুল হোসেনের নাম উঠে আসে। মৃতদের পরিজনদের অভিযোগ, অগ্নিকাণ্ডের সময় বাঁচার তাগিদে দলের ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এমনকী স্থানীয় থানাতেও বিষয়টি জানাননি। ধীরে ধীরে বীরভূমের রামপুরহাটের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বেতাজ বাদশা হয়ে ওঠেন আনারুল হোসেন। শোনা যায়, বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং রামপুরহাটের বিধায়ক রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিনি আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। তৃণমূলের জেলা কমিটিরও সদস্য হন। পেল্লাই বাড়ি, অর্থের সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় তার প্রভাবও বাড়তে থাকে। গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর অনুগামীদের একাংশের অভিযোগ, গণহত্যার ঘটনায় আনারুল হোসেনকে ফাঁসানো হয়েছে। কিন্তু কে তাঁকে ফাঁসাল? কেনই বা ফাঁসাল? পুলিশি তদন্তে তা কী উঠে আসবে? অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে’র আভাস দিয়েছেন। কী সেই বৃহত্তর ষড়যন্ত্র! রাজ্যবাসীর অজানা থেকে যাবে না তো!