মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রামপুরহাট গণহত্যায় গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত তৃণমূলনেতা

বগটুইতে শোকাহতদের সান্ত্বনা মুখ্যমন্ত্রীর। ইনসেটে ধৃত আনারুল হোসেন। ছবি–সংগৃহীত।

ডিজিটাল ডেস্ক, ২৪ মার্চ : রামপুরহাট-গণহত্যায় সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। ঘটনার উত্তাপ দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছেছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার হন রামপুরহাট গণহত্যায় মূল অভিযুক্ত আনারুল হোসেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তারাপীঠ থেকে তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার রামপুরহাটে পৌঁছে আক্রান্ত ও নিহতদের পরিবারের লোকদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আক্রান্তদের পরিবারের তরফে তাঁর কাছে আনারুলের গ্রেফতারির দাবি জানানো হয়। এর পরই মুখ্যমন্ত্রী জানান, আনারুলকে হয় আত্মসমর্পণ করতে হবে, নইলে গ্রেফতার করবে পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে রামপুরহাট ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তারাপীঠে একটি হোটেলের কাছ থেকে আনারুলকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিতেই এ দিন দুপুরে আনারুলের বাড়িতে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী। সেখানে মহিলা ও শিশুদের নীচের তলায় এনে গোটা বাড়ি প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে পুলিশ তল্লাশি চালায়। বাড়ির বাইরে তখন আনারুলের অনুগামীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁদের দাবি, আনারুলকে দলেরই জেলাসভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ফাঁসিয়েছেন। কারণ, ভাদু শেখ খুনের দিন হাসপাতাল আর থানায় গিয়েছিলেন আনারুল। বাগটুই গ্রামে সোনা শেখের বাড়ির ত্রিসীমানায় তাঁকে দেখা যায়নি তাঁকে। ভাদু শেখের অনুগামীরাই সেখানে অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশকর্মীরা ছিলেন বলে সোনা শেখের পরিজনরা জানিয়েছেন। তাহলে আনারুলের ভূমিকা কী? স্থানীয়রা জানান, পেশায় রাজমিস্ত্রি আনারুল ২০১১ সাল থেকে ঠিকাদারি শুরু করেন। একই  সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক উত্থান। সম্প্রতি তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলে রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের সভাপতি নিযুক্ত হন তিনি।

তৃণমূলের নেতা খুনের পর একের পর  এক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তাতে কতজন প্রাণ হারিয়েছেন, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয় জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটানো হয়ে থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার বগটুইয়ে এসে এখানকার বাসিন্দাদের কাছেই নয়, বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের তোলা সব দাবিরও কার্যত জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। দল হিসেবে বিজেপি তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বুধবার বলেছিলেন, ‘‘রাজ্যকে বলব দোষীরা যেন দ্রুত সাজা পায়।’’ এ দিন দুপুরে সেই ‘সুবিচার’-এর কথা শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই তিনি কর্তব্যে অবহেলা করা পুলিশকর্মীদের কড়া নিন্দা করেন। একই সঙ্গে জেলা পুলিশকে নির্দেশ দেন, বগটুই গ্রামের বাড়িগুলিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আনিরুলকে গ্রেফতার করতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘আমি চাই আনিরুল থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করুক। নইলে যেখান থেকে হোক তাকে গ্রেফতার করতে হবে।’’ সেখানেই না থেমে মমতা পুলিশকে নির্দেশ দেন, মামলা এমন ভাবে সাজাতে হবে, যাতে কোনও ভাবেই অভিযুক্তরা ছাড়া না পায়। মমতার ঘোষণার পরই পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। এ দিন সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই ছিলেন  রাজ্য পুলিশের ডিজি। সূত্রের খবর, এ দিনই রামপুরহাট থানার আইসি ত্রিদীপ প্রামাণিককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। রামপুরহাটের এসডিপিও সায়ন আহমেদকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে  পাঠানো হয়। ঘটনার পরই তাঁদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তদন্তে কর্তব্যে গাফলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ত্রিদীপ প্রামাণিককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এ দিন-ই বিজেপি-র পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল বগটুই গ্রামে আসে । এই দলে রয়েছেন সুকান্ত মজুমদার ও ভারতী ঘোষ-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। পাশাপাশি বগটুইতে এসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘বগটুই নিয়ে বিভ্রন্তি তৈরি করছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ বিজেপি দলের প্রতিনিধিদের সাঁইথিয়ায় ও অধীর চৌধুরিকে শ্রীনিকেতনে পুলিশ আটকে দেয়। মুখ্যমন্ত্রী চলে গেলে সেখান থেকে তাঁরা বগটুইতে আসেন ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বগটুইতে জেলাশাসককে ডেকে বলেন, ‘‘যাঁদের বাড়ি পুড়ে গিয়েছে, তাঁদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে ঘর বানানোর জন্য দিতে হবে ।’’ জেলাশাসক জানান, তিনি তৈরি হয়েই এসেছেন। টাকা দিয়ে দেবেন। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে কোনও কার্পণ্য করা চলবে না। প্রয়োজনে দু’লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হবে।’’ শুধু পোড়া বাড়ি সারানো নয়, ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন মমতা। জখম তিনটি শিশুর জন্য ৫০ হাজার টাকা করে এবং গুরুতর জখমদের এককালীন এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here