মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় বঙ্গে পুজো

ছবি–সংগৃহীত

বাংলাকে শারদোৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে চান না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, এই উৎসবের সঙ্গে শুধু আনন্দ নয়, জড়িয়ে রয়েছে অর্থনীতি। কোভিড-১৯ এই অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। বিশেষ করে ছোটো ব্যবসায়ীরা বিপর্যস্ত। তাঁদের রোজগার তলানিতে এসে ঠেকেছে। তাই পুজোতেও রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা। এই অনুপ্রেরণা যতই ঝুঁকির হোক না কেন, বিরোধীদের কথামতো তার মধ্যে যতই ‘ভোটের রাজনীতি’ থাক না কেন, বঙ্গবাসী এখন উৎসবে মাতোয়ারা। তাই পুজোর কেনাকাটা করতে যে ভাবে কলকাতা থেকে জেলার বাজারগুলিতে ভিড় জমছে, তাতে সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলার ফতোয়া কার্যত শিকেয় উঠেছে। তাই পুলিশ-প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কারণ, আমজনতা যদি সচেতন না হয়, পুজোর আবেগে ভেসে বাড়ি থেকে তারা দলবেঁধে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়ে, আর সেই ভিড় যদি বিগত বছরগুলির মতো বাঁধভাঙা জনস্রোতে পরিণত হয়, তা হলে ‘গোষ্ঠীসংক্রমণ’ হাতের বাইরে চলে যাবে।

    কেরালায় ওনাম উৎসবের পরই করোনার সংক্রমণ লাফ দিয়ে বেড়েছে। বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে ওনাম উৎসবে কেরালাবাসী মেতে ওঠায় এই বিপত্তি। মানছেন বঙ্গের চিকিৎসকমহলের একাংশ। তাদের আশঙ্কা পুজোর ভিড় ‘করোনা-সুনামি’তে পরিণত হতে পারে। এই আশঙ্কার কথা কলকাতা হাই কোর্টেও পৌঁছেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত কী রায় দেবে, তা সময়ই বলবে। তার আগে ওনাম থেকে শিক্ষা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক উৎসব ঘরে বসে পালনের জন্য দেশবাসীর কাছে আবেদন করেছে। এ দিকে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বঙ্গবাসীকে উৎসব পালনে অনুপ্রাণিত করছেন। যদিও তিনি বলছেন, সতকর্তার সঙ্গে উৎসব পালন করতে হবে। কারণ, অনেকে জায়গাতেই করোনার গোষ্ঠীসংক্রমণ শুরু হয়েছে। তবুও মুখ্যমন্ত্রী আমজনতাকে উৎসববিমুখ করতে চান না। মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী বলেই তিনি উদ্যোক্তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে পুজোমণ্ডপে গিয়ে দেবীর চোখ আঁকছেন, ক্লাবগুলিকে অনুদান দিয়ে তাদের পুজো করতে অনুপ্রাণিত করছেন। আবার নবান্ন থেকে একের পর এক পুজোর ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করছেন। ইতিমধ্যে অনুদান নিয়ে হাই কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার।

    এই আবহে পুজো বন্ধ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা যে নেই, তা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্যেই স্পষ্ট। সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁর বক্তব্য, ‘‘দুর্গাপুজো শুধু বাঙালির উৎসব নয়, জাতীয় উৎসব। সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গাপুজো হবে। এই বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। ক্লাবগুলো সচেতন রয়েছে। পুজোয় যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়, তার জন্যে পুলিশ, স্বাস্থ্য দফতর, নবান্ন সজাগ রয়েছে। উৎসব চলবে। করোনাও থাকবে। সচেতনতার মধ্যে দিয়েই পুজো হবে।’’ ইতিমধ্যে করোনার সংক্রমণ যে বাড়ছে, তার সংকেতও রয়েছে। উত্তর ও  দক্ষিণ ২৪ পরগনায় করোনা সংক্রমণের হার এখন ঊর্ধ্বমুখী। তাই দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা-প্রশাসনকে লাল সতর্কতা জারি করতে হয়েছে। বিপদ বুঝে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কলকাতার কয়েকটি মণ্ডপে উদ্যোক্তারা ভিড় আটকাতে দর্শকহীন পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মল্লিকবাড়ি, শোভাবাজার রাজবাড়ি, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার তার উদাহরণ। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, ‘পুজোয় অংশগ্রহণ করতে পারবেন শুধুমাত্র পল্লির বাসিন্দারা। তবে ভার্চুয়ালি ঠাকুর দেখার ব্যবস্থা করা হবে। এই সিদ্ধান্ত হৃদয়বিদারক হলেও মানুষের জীবনের থেকে উৎসবের মূল্য বেশি হতে পারে না। তাই আশা করব অন্যান্য পুজো কমিটিগুলিও আমাদের এই সিদ্ধান্তের শরিক হবে।’ এই আবেদন আক্ষরিক অর্থেই সময়োপযোগী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here