উৎসব, নিষেধাজ্ঞা এবং শঙ্কা

চলছে প্রতিমা বানানোর কাজ। ছবি–সংগৃহীত

বাংলাকে শারদোৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে চান না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই মহালয়ার সকালে তিনি উৎসবপ্রিয় বাঙালিকে টুইট করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন করোনা পরিস্থিতিতে কেউ দুর্গাপুজোর উৎসব থেকে বঞ্চিত হবে না। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘‌কোভিড পরিস্থিতিতে অনেক সতর্কতার সঙ্গে আমাদের উৎসব পালন করতে হচ্ছে। তবে করোনা যেন দুর্গাপুজোর উৎসাহকে দমিয়ে দিতে না পারে।’ কিন্তু আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

    কারণ, কেরালায় ওনাম উৎসবের পরই করোনার সংক্রমণ লাফ দিয়ে বেড়েছে। বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে ওনাম উৎসবে কেরালাবাসী মেতে ওঠায় গত এক মাসে ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে সংক্রমিতের সংখ্যা। ওনামের ঠিক পরেই ২ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর কেরালায় ২২,১৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবরের মধ্যে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৮৪,৯৫৮। এই পরিস্থিতিতে পিনারাই বিজয়ন সরকারকে রাজধানী তিরুবনন্তপুরমে আমজনতাকে ঠেকাতে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে। পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধে নতুন করে কনটেনমেন্ট জোন তৈরি করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। অন্য রাজ্য থেকে কেউ তিরুবনন্তপুরমে পা রাখলেই তাঁকে চোদ্দদিন নিভৃতবাসে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্যথায় উপসর্গহীনদের সাতদিনের মাথায় র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

    বঙ্গে দুর্গাপুজো কড়া নাড়ছে। এর পর দশেরা, দীপাবলি ও ছটপুজো রয়েছে। আমজনতা যদি নিয়মের তোয়াক্কা না-করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফের সংক্রমণ কয়েক গুণ বাড়বে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ উড়িয়ে  দিতে পারছেন না যে,  কেরালায় ওনামের পরে সংক্রমণ বেড়েছে। উৎসবের মরসুমে তাই রাজ্যগুলি কী ভাবে করোনা সংক্রমণ ঠেকাবে, তা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ। তা মাথায় রেখে  দেশজুড়ে আসন্ন উৎসবের মরসুমে একাধিক নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ১) কনটেনমেন্ট জোনে কোনওরকম অনুষ্ঠান যাবে না, ২) ৬৫ বয়সের ঊর্ধ্বে প্রবীণ, কোমর্বিডিটি থাকা মানুষ, অন্ত্বঃস্বত্ত্বা মহিলা এবং ১০ বছরের কম শিশুদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেই পরামর্শ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রেও প্রয়োজ্য হবে, ৩) বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক বা মুখাবরণী ব্যবহার করতে হবে, ৪) থুতু ফেলার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকছে, ৫) আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউনলোড এবং তা ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, ৬) ধর্মীয় স্থানে অনুষ্ঠান, মিছিল, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা-সহ যাবতীয় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আগেভাগে পরিকল্পনা করতে হবে। তাতে শামিল থাকবে অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা, বাজারের কমিটি-সহ সবপক্ষ, ৭) শুধুমাত্র কনটেনমেন্ট জোনের বাইরে উৎসব পালন করা যাবে। অনুষ্ঠানের যে উদ্যোক্তা বা কর্মী বা দর্শকদের বাড়ি কনটেনমেন্ট জোনে, তাঁদের অনুমতি দেওয়া হবে না। যাঁরা কনটেনমেন্ট জোনের কাছে থাকেন, তাঁদের বাড়িতেই উৎসব পালনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, ৮) সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে চলার জন্য অনুষ্ঠানের জায়গায় উপযুক্ত পরিমাণ ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে। মানুষের দাঁড়ানোর জায়গা চিহ্নিত করে রাখতে হবে। অর্থাৎ কেন্দ্রের নির্দেশিকা মতো, পুজোর মণ্ডপে এ বার আর হুড়োহুড়ির সুযোগই নেই। নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে দেবী দর্শন করতে হবে।

    যদিও পুজোর সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি কীভাবে করা হবে, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। আশঙ্কাটা এখানেই। বঙ্গে চিকিৎসক মহলের একাংশ পুজোর ভিড় থেকে করোনার সংক্রমণ ‘সুনামি’র আকার নিতে পারে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে আগাম চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছে। কাজেই উৎসবে মেতে স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় তুললে পরিস্থিতি যে হাতের বাইরে চলে যাবে, তা ভুলে গেলে সেটাই হবে পুজোর সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here