করোনায় হোমিওপ্যাথি

কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে হোমিও চিকিৎসার যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। এমনটাই দাবি করছেন হোমিও চিকিৎসকরা। এ নিয়ে জানাচ্ছেন ডাঃ সুমিত সরকার

ডাঃ সুমিত সরকার

হোমিও চিকিৎসকরাই বলেন, এই পদ্ধতি অনুযায়ী রোগীর চিকিৎসা হয়, রোগের নয়। এ কারণে কোনও রোগের চিকিৎসার শুরুতে রোগীর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস দমনে বা এই রোগ নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা কি আদৌ ফলপ্রসূ হতে পারে? বিশেষজ্ঞরা অবশ্য জোর গলায় দাবি করছেন, কোভিডের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির যথেষ্ট কার্যকারিতা আছে।

    এই মুহুর্তে যে কয়েকটি হোমিওপ্যাথি ওষুধের নাম প্রায় সবার মুখে মুখে ঘুরছে তা হল, আর্সেনিকাম অ্যালবাম, ব্রায়োনিয়া অ্যালবাম, টিউবারকিউলিনাম, জেলসেনিয়াম, অ্যন্টিম টার্ট ইত্যাদি। আয়ুষ মন্ত্রালয় থেকে বলা হয়েছে, করোনার ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবে আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ খাওয়া যেতে পারে। সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিওপ্যাথির গবেষকরা আর্সেনিকাম অ্যালবা ৩০ প্রয়োগ করে এই রোগ প্রতিরোধে সফল হওয়ার পরেই এই ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দেন। বেশ কিছু রাজ্যে এই ওষুধ দিয়ে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টাও চলছে। এ ছাড়াও সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিওপ্যাথি থেকে প্রকাশিত জার্নালে এও বলা হয়েছে, এই ওষুধ শ্বাসনালির মিউকাস মেমব্রেন সুস্থ রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ওষুধ খাওয়ার নিয়ম

    প্রথম তিনদিন সকালে খালিপেটে বড়দের ক্ষেত্রে চারটে বড়ি আর দশবছরের নীচের বাচ্চাদের দু’টো করে বড়ি খাওয়া। আবার এক মাস বাদে তিনদিন একই ভাবে খেতে হবে। যেখানে অসুখটা ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে ১৫ দিন অন্তর খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিকদের এই ওষুধ প্রয়োগে খুব ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে। তবে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে শারীরিক উপসর্গ দেখে চিকিৎসা করতে হবে ।  যদিও একথা ঠিক, আশি শতাংশ ক্ষেত্রে করোনা রোগীর শরীর থেকে নিজে থেকেই চলে যায়। কোনও চিকিৎসারই দরকার হয় না।

মনে রাখতে হবে, হোমিওপ্যাথি ওষুধ মানেই তা মুড়িমুড়কির মতো ব্যবহার করা যাবে না। সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খেতে হবে । অন্যথায় হিতে বিপরীত হতেই পারে।

    অ্যালোপ্যাথিতে  কোভিড-১৯ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। কারণ, এই রোগের চিকিৎসায় নির্দিস্ট কোনও ওষুধ অ্যালোপ্যাথিতে নেই। সেখানে হোমিওপ্যাথিতে দেখা যাচ্ছে, অল্প-স্বল্প উপসর্গ দেখা দিলে যদি ব্রায়োনিয়া অ্যালবা ২০০ রোগীকে দেওয়া হয়, তা হলে সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে আসা রোগীদের এই ওষুধ দিয়ে উপকার পাওয়া যাচ্ছে।  এমনকী করোনা হলেও যাঁদের উপসর্গ দেখা দেয়নি অর্থাৎ আসিম্পটোমেটিক তাঁদেরও এই ওষুধে ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

    আসলে আমাদের চিকিৎসাশাস্ত্রে জেনাস এপিডেমিকাস নামে একটা শব্দ আছে। যার অর্থ হল কোনও অসুখের চিকিৎসায় সবচেয়ে ব্যবহৃত ওষুধ কী, তা জানা। দেখা গিয়েছে যে, করোনার মতো উপসর্গ থাকা রোগীদের ওপর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে ব্রায়োনিয়া অ্যালবা ২০০।  তাই এই ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এই ওষুধ খেলে অন্য সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না বললেই চলে। আর ভাইরাস তার চরিত্র বদলে ফেললেও এই ওষুধে ভালই কাজ হয়।

    ওষুধ ছাড়াও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মানার উপরেও জোর দিতে হবে। বার বার সাবান জলে ভাল করে হাত ধোয়া, বাইরে থেকে ফিরে জামাকাপড় সাবান জলে ধুয়ে নেওয়া, যেখানে-সেখানে হাত না দেওয়া, বাইরে গেলে মাঝে-মধ্যেই হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করা। আর মনে রাখতে হবে, হোমিওপ্যাথি ওষুধ মানেই তা মুড়িমুড়কির মতো ব্যবহার করা যাবে না। সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খেতে হবে । অন্যথায় হিতে বিপরীত হতেই পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here