মানসিক সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা

জানাচ্ছেন স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ডাঃ ইন্দ্রনীল সাহা

ডাঃ ইন্দ্রনীল সাহা

ক সময় যারা সপ্তাহে একটা বাড়তি ছুটির জন্য হাপিত্যেশ করতেন, লকডাউনের জন্য দিনের পর দিন বাড়ি থাকার জন্য তাঁদের অনেকেই যেন হাঁপিয়ে উঠছেন। কেউ কেউ মানসিকভাবেও অসুস্থতার দিকে এগোচ্ছেন। এই সমস্যা অনেক বেশি প্রকট হয়ে উঠছে, যাঁরা বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁদের।

     নিজের মনখারাপের কথা কারওর কাছে বলতেও পারছেন না মুখ ফুটে। নেটফ্লিক্সে ছবি দেখা বা টিভিতে করোনার আপডেট জানার সময় স্বামীর সঙ্গে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গেলে বোঝা যায় কিছুটা বিরক্ত। আর নিজেদের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার কথা বলতে গেলে অনেক সময় জবাব পাওয়া যায়– সব সময় এক বিষয় নিয়ে ঘ্যানঘ্যান কোরো না তো। চেষ্টা তো আগেও করেছি নাকি!  আবার লকডাউন উঠলে আবার চেষ্টা করব। তাতে যত টাকাই খরচ হোক, সব সময় এক কথা শুনতে ভালো লাগে না।

    মুখে যাই বলুন তিনি, ওদিকে মনে মনে তাঁরও অন্য চিন্তার মেঘ।  সহকর্মীদের কাছে কাছে শুনেছেন, কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু কর্মচারী ছাঁটাই করতে চলেছে। নিজের চাকরিটা থাকবে তো! এই বয়সে কোথায়-ই বা নতুন চাকরি পাবেন? ফ্ল্যাটের ইএমআই, সংসার খরচ সব সামলাবেন কী করে! একই আশঙ্কায় আশঙ্কিত স্ত্রী। তাঁর অফিস থেকেও মাইনে কমানোর ফতোয়া জারি করা ইমেল এসে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ইনফার্টিলিটির খরচও নিশ্চয়ই বাড়বে। কীভাবে সামলানো যাবে সেই খরচ!

 মানসিক উদ্বেগ বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার পথে বড় বাধা। কাজেই নিজেকে শারীরিকভাবে শুধু নয়, মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে হবে।

    আবার লকডাউন উঠে যাওয়ার পরেও ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়া, দরকারি পরীক্ষা করানো, সে সবের সময়েও নিজেকে কতটা করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন, চিন্তা তা নিয়েও।  ডাক্তারবাবু জানিয়েছেন, মানসিক উদ্বেগ বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার পথে বড় বাধা। কাজেই নিজেকে শারীরিকভাবে শুধু নয়, মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে হবে। কিন্তু দিনের পর দিন বাড়িতে বন্দি থেকে তা একরকম অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

    আগে একটু নিজের স্পেস ছিল।  খুব কাছের লোকের সঙ্গে নিজের ভালমন্দ নিয়ে আলোচনা করার সুবিধা ছিল। এখন সারাক্ষণ সবাই একসঙ্গে। মন খুলে কথা বলার সুযোগ কম। সব মিলিয়েই এক মনখারাপের পরিস্থিতি। কিন্তু নিজেকে সুস্থ রাখতেই হবে। সে জন্য নিজেকেই নিজের চলার পথ ঠিক করতে হবে। যেমন–

  • যদি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মনের কথা শেয়ার করতে না পারেন, নিজের মতো থাকুন।  ব্যালকনিতে দাঁড়ান, উঠোনে বেড়ান, ছাদে হাঁটুন।

  • বাড়ির কাজ ভাগ করে নেওয়ার কথা বলা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয় না। আর এই কথা নিজে যখন বুঝতে পারবেন, তখন নিজের সাধ্যমতো কাজ করুন। রান্না থেকে ঘর পরিষ্কার– সবকিছু নিজের সামর্থ্যের মধ্যে করুন। সবাইকে সন্তুষ্ট করতে যাবেন না। তা করা সম্ভবও নয়।

  • চাকরির অনিশ্চয়তা নিয়ে চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক হলেও তা নিয়ে বেশি ভেবে লাভ নেই, তা বোঝার চেষ্টা করুন। যে বিষয় আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, তা নিয়ে ভেবে নিজের মন খারাপ করা অর্থহীন। তার চেয়ে আগেভাগে অন্য চাকরির চেষ্টা করতে পারেন।

  • নিজের কোনও কথা স্বামীর সঙ্গে শেয়ার করার সময় তাঁর মানসিক অবস্থাও বোঝার চেষ্টা করুন। তিনি অনলাইনে সিনেমা দেখছেন মানেই যে সাংঘাতিক খুশি মনে আছেন, তা না-ও হতে পারে। হয়তো নিজের মানসিক চাপ কমানোর জন্য তিনি ওই উপায় বেছে নিয়েছেন। তাঁকেও বোঝার চেষ্টা করুন।

  • নিজের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে হাসি, মজার গল্প করুন। এতেও মন হালকা হবে। সব সময় নিজের সমস্যার কথা নিয়ে ভাববেন না বা আলোচনা করবেন না। এতে যার সঙ্গে করছেন, তিনি তা ভালো মনে নাও নিতে পারেন।

যোগাযোগ-৯৮৩০২ ৪১১১১।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here