করোন ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গ। মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো বঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে সুপার সাইক্লোন আমফান। তার দাপটে তছনছ হয়ে কলকাতা সমেত দুই ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকা। কাকদ্বীপ, নামখান সমেত দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এখন শুধুই ধ্বংসের ছবি। কলকাতা থেকে দিঘা–সর্বত্রই একই ছবি। একে লকডাইন, তার উপর যোগাযোগ ছিন্ন হয়েছে। খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় নেই বিদ্যুৎ। আর বিদ্যুৎ না থাকায় জলসংকট তীব্র আকার নিয়েছে। ফলে অলিগলি থেকে বড় রাস্তায় ছেলে-মেয়েরা একজোট হয়ে পথে নেমেছেন। কোথাও মানা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব। কোথাও তা মানা হচ্ছে না। তাঁদের অভিযোগ, বিপর্যয় মোকাবিলায় ব্যর্থ পুরসভা থেকে বিদ্যুৎ দফতর। এ নিয়ে এই দুই দফতরের মধ্যে যখন চাপান-উতোর চলছে, তখন বিপদ আঁচ করতে পেরেই মানুষের অসন্তোষে প্রলেপ দিতে মাঠে নেমেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনীকে তলব করেছেন।
বিক্ষোভকারীদের কাছে হাতজোড় করে ‘ধৈর্য’ ধরার অনুরোধও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি। আমি ও আমার টিম কেউ তিনদিন ঘুমাইনি। দিন-রাত এক করে কাজ করছি। সব দলকে বলব, কিছুদিনের জন্য ক্ষান্ত হন। কাজ করতে দিন। পছন্দ না হলে আমাকে গুলি করুন। নইলে আমার মাথা কেটে নিন।” আর বিরোধীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘‘নির্বাচনের সময় যতখুশি রাজনীতি করুন। কিন্তু এই বিপর্যয়ের সময় ক্ষান্ত দিন। এই পরিস্থিতিতে দয়া করে ক্ষুদ্র রাজনীতি করবেন না।’’ তাতেও চিঁড়ে ভিজছে না। তাই ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশকে বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করতেই হচ্ছে। এর ফলে হিতে বিপরীত হচ্ছে কিনা, তা সময়ই বলবে।
তবে কাকদ্বীপ, নামখানার মানুষের অভিযোগ, ত্রাণ-তো দূরের কথা, দুর্গদের পাশে থাকার প্রয়োজন বোধ করছেন না সরকারি কর্মী বা শাসকদলের নেতারা। এ নিয়ে বিরোধীরা তো সরব হয়েছেন-ই, তাঁদের সুরে সুর মিলিয়েছেন খোদ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।। তিনি ফের রাজ্য সরকারকে খোঁচা দিয়ে টুইট করেছেন। লিখেছেন, “মানুষ বেঁচে থাকার সামান্য মৌলিক অধিকারটুকু পাচ্ছে না।’’
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যপালের বিরোধ নতুন কিছু নয়। আগেও তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে টুইট করেছেন, চিঠি লিখেছেন। এ বার তিনি আমফান পরবর্তী সময়কেও হাতিয়ার করেছেন। রাজ্যপালের খোঁচা, ‘‘মানুষ ন্যূনতম পরিষেবা পাচ্ছে না। মানুষ অত্যন্ত দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এ সব দেখে আমি ব্যথিত।” তিনি আরও বলেন, “সরকারের কাছে আমার আর্জি, সরকারি সমস্ত সংস্থাগুলি অবিলম্বে সমস্ত শক্তি দিয়ে পরিষেবা চালু করুক।” রাজ্যবাসীর কাছে তাঁরও আবেদন, এই কঠিন সময়ে নিজেদের ধৈর্য ধরে রাখার। সকলেই যাতে সংযত হয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন, আবেদন করেছেন তিনি। তবে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে উপড়ে পড়া গাছ কাটতে সেনার সাহায্য নেওয়া ঘিরেও মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, “রাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে সেনার সাহায্য আরও তিনদিন আগে নেওয়া যেত।” এখানেই প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী কি নিজের ভালো বোঝেন না?