ডিজিটাল ডেস্ক, ২৭ জুলাই: পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে নেমে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিজেপিকে তুলোধোনা করছেন, ঠিক তখন-ই ভোটমুখী মধ্যপ্রদেশে বিজেপির সভাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিশানা হল তৃণমূল। আসলে শাসক-বিরোধী শিবিরের লক্ষ্য আগামী লোকসভার ভোটের লড়াই। তাই ’২৪-এর লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে শুরু হয়েছে তার মহড়া। সেই মহড়ায় বঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটকে খাটো করতে দেখতে নারাজ শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী ৮ জুলাই এই ভোটের লড়াইয়ে শাসকদলের চোখে চোখ রেখেছে বিরোধীরা। তাই রক্তাক্ত হচ্ছে ভোটের ময়দান। এই আবহে বিরোধীরা তৃণমূল সরকারের নানা ‘দুর্নীতি’কেই হাতিয়ার করেছে। পালটা শাসক-শিবির সরকারের ‘উন্নয়নে’র খতিয়ান তুলে ধরে ভোটের প্রচারে নামলেও তাদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
সেইমতো উত্তবঙ্গ সফরে এসে জলপাইগুড়ির চেকেন্দার জনসভা থেকে চা-বাগান নিয়ে বিজেপিকে তোপ দেগে মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েও কোনও চা-বাগান খোলেনি। আমরাই সব চা-বাগান খুলে দিয়েছি। সেখানকার শ্রমিকদের পাট্টা দেবে রাজ্য সরকার। কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। চা-শ্রমিকদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার।’’ আর ভোটমুখী মধ্যপ্রদেশে বিজেপির সভাতেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিশানা হল তৃণমূল।
মঙ্গলবার ভোপালে বিজেপির বুথ কমিটির সভাপতিদের নিয়ে ‘মেরা বুথ সবসে মজবুত’ কর্মসূচিতে তৃণমূল-শাসিত বাংলায় নানা দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে গরু পাচার, শিক্ষক নিয়োগ থেকে কয়লাকাণ্ড–নানা ক্ষেত্রে বাংলায় দুর্নীতি চলছে বলে প্রধানমন্ত্রীর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে ২৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। রোজ় ভ্যালি দুর্নীতি, সারদা দুর্নীতি, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, গরু পাচার, কয়লা পাচার চলছে। বাংলার মানুষ কখনও এই দুর্নীতি ভুলতে পারবে না।’’ চলতি মাসেই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘রোজগার মেলা’ কর্মসূচিতে পশ্চিমবঙ্গ এবং তৃণমূলের নাম না করে, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন মোদী। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সম্প্রতি আপনারা একটি রাজ্য থেকে পাওয়া খবরে দেখেছেন কী ভাবে ‘ক্যাশ ফর জব’-এর ঘটনা ঘটেছে। রেস্তরাঁয় রেট কার্ডের মতোই সেই রাজ্যে বিভিন্ন স্তরের সরকারি চাকরির বিভিন্ন ‘দর’ রয়েছে।’’
শাসক-বিরোধীদের দ্বৈরথ নতুন মাত্রা পেয়েছে পটনা বৈঠকে। সেখান থেকে ফিরে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে নেমে বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার চেকেন্দায় প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ ভ্রমণ নিয়েও কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ‘‘দেশকে বেচে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।’’ প্রধানমন্ত্রীর নাম না করে মমতার অভিযোগ, ‘‘উনি রাশিয়া, আমেরিকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এ দিকে টম্যাটো ১০০ টাকা কেজি। টম্যাটোর দাম কেজিতে ১০০ টাকারও বেশি হয়ে দিল্লি, মুম্বাইয়ে।’’ তৃণমূল নেত্রীর কথায়–বিজেপির আয়ু আর মাত্র ৬ মাস। আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনে দেশ থেকে ধুয়ে যাবে বিজেপি। অবশ্য সম্প্রতি বীরভূমের সিউড়িতে বিজেপির ডাকা সমাবেশ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলে যান, “২০২৫-এর আগেই তৃণমূল সরকার পড়ে যাবে।”