ডিজিটাল ডেস্ক, ২৯ মার্চ: কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আর্থিক বঞ্চনা’র প্রতিবাদে বুধবার কলকাতায় রেড রোডে ধরনায় বসেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি বঙ্গ-বিজেপি শ্যামবাজারে পাল্টা কর্মসূচি নেওয়ায় এ দিন শাসক-বিরোধী দলের তরজা জমে ওঠে। সেই তরজায় নয়া সংযোজন–‘জাদুকর’ মমতা।
পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা লুঠ করছে তৃণমূল সরকার। এমনটাই অভিযোগ বিজেপির। এ ছাড়াও রয়েছে নিয়োগে দুর্নীতি। এ রকম একাধিক ‘দুর্নীতি’র প্রতিবাদে শ্যামবাজারে বিজেপির ধরনায় বাড়তি আকর্ষণ ছিল নাটক-নাচ-গান। সেখানে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারি, রাহুল সিনহা, সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ, অগ্নিমিত্রা পাল-সহ রাজ্য বিজেপির একাধিক নেতানেত্রী। অন্যদিকে, বিজেপির বিক্ষোভ-মঞ্চকে এ দিন শাসকদলের তরফে কটাক্ষ করা হয়। দল বদলে বিজেপিতে গিয়ে বহু ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ নেতা তদন্ত এড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করে তৃণমূল। বিজেপি দলকে এই মর্মে ‘ওয়াশিং মেশিন’ বলেও কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ধরনা মঞ্চে সেই প্রতীকী ওয়াশিং মেশিন তুলে ধরেন। তাতে কালো কাপড় দিলেই নাকি নিমেষে সাদা হয়ে যায় বলে তিনি দাবি করেন। এমনকী জাদুকরের মতো নিজের হাতে কালো কাপড় মেশিনে দিয়ে সাদা করে নজর কাড়েন মমতা। তখন মঞ্চে বসে থাকা তৃণমূলের নেতানেত্রীরা গান ধরেন–ওয়াশিং মেশিন ভাজপা, ওয়াশিং মেশিন ভাজপা, কালোকে করে সাদা, এটাই এর ফায়দা।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারি শ্যামবাজারে বিক্ষোভ-মঞ্চ থেকে দাবি করেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধরনায় বসতে পারেন না মমতা।’’ এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান–কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এবং গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের বিরুদ্ধে দু’দিন ধরে ধরনা চলবে। তা হলে মঞ্চে দলের লোগো কেন? মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে এই প্রশ্ন করা হলে মঞ্চ থেকে তার জবাব দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘একটা হল আমি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাই বাংলার মানুষের সঙ্গে কোনও অবিচার হলে আমার উপর একটা দায়বদ্ধতা থাকে। মানুষের সেই দায়িত্বটা পালন করার। আর দুই হচ্ছে আমি অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান। এবং এই সরকার সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের। তাই আজকের এই ধরনা রাজ্য সরকারের তরফ থেকে না করে আমরা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে করছি। তার কারণেই আপনারা তৃণমূল কংগ্রেসের লোগো দেখতে পাচ্ছেন। সুতরাং আমি ডবল ডিউটি পালন করছি।’’ সেইসঙ্গে মমতা জানান– এটা হল দলের অনুষ্ঠান। তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু আমরা সরকারের তরফ থেকে আছি। আমাদের সব মন্ত্রীরাও আছে। এবং আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন সামনে সংবিধানও আছে। সংবিধান তারাই রাখে, যারা ভারতের গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা করে। ভারতের সংবিধানকে সম্মান করে। ভারতবর্ষের নাগরিকত্ব, ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষতা, ভারতবর্ষের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য আজকে আমরা এখানে বসেছি।’’ এ দিন দিল্লিতে সংসদ ভবন চত্বরে সংবিধান রক্ষার দাবিতে ধরনা দেন তৃণমূল সাংসদরা। সংসদে তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অপব্যবহার করা হচ্ছে।’’ তার পাল্টা মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘যাঁরা দুর্নীতিতে আপাদমস্তক জড়িত, তাঁদের মুখে এ কথা শোভা পায় না।’’ তবে এ দিন রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে এ বার নাম করেই তাঁর পাশে দাঁড়ালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শহিদ মিনারের জনসভা থেকে কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তিনি সুর চড়ান। ২৩ মার্চ, বৃহস্পতিবার সুরাতের একটি আদালত ‘মোদী’ পদবি নিয়ে রাহুলের আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য দু’বছর জেলের সাজা শোনায়। পরের দিনই রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা।