ডিজিটাল ডেস্ক, ২১ ফেব্রুয়ারি: আজ, মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আলপনা আর দেওয়ালচিত্রে সেজে ওঠে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদমিনার চত্বর। সোমবার রাত থেকেই খালি পায়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি গেয়ে ঐতিহাসিক এই দিনটিতে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ ভাষা আন্দোলনের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর যত সময় গড়িয়েছে শহিদ মিনারে ফুল এবং ব্যানার হাতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। এই ভিড়ে শিশুরাও সামিল হয়। সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্থাপিত বিকল্প শহিদমিনার চত্বরে প্রদীপ প্রজ্বলন করেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতা-কর্মীরা।
পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন নিশ্চিত হওয়ার পর উর্দু-বাংলা বিতর্ক নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তৎকালীন ‘মিল্লাত’ পত্রিকায় এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, ‘‘মাতৃভাষার পরিবর্তে অন্য কোনও ভাষাকে রাষ্ট্রভাষারূপে বরণ করার চাইতে বড় দাসত্ব আর কিছু হতে পারে না।’’ ধীরে ধীরে অর্থনীতি ও রাজনীতিও সেই বিতর্কের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের কয়েক মাসের মধ্যেই পাকিস্তানের প্রথম মুদ্রা, ডাকটিকিট, ট্রেনের টিকিট, পোস্টকার্ড থেকে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দু ও ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের এই ঘোষণায় পর ঢাকায় ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। তৎকালীন পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাংলাভাষীরা উর্দুভাষীদের চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন। তারপরও ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসে রেসকোর্স ময়দানে মহম্মদ আলি জিন্নাহ এক সমাবেশে ঘোষণা করেন ‘‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা।’’ পাল্টা স্লোগান ওঠে ‘‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’’। স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মিছিল হয়। তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর পর সেই ২১ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। ধর্মঘট প্রতিহত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। যা লঙ্ঘন করেই জন্ম হয়েছিল শহিদ দিবসের। ১৯৫২ সালের সেই দিনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছেই গুলিবর্ষণ হয়েছিল শিক্ষার্থীদের উপর। সেদিন এবং পরদিন পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার এবং শফিউর ছাড়াও আরো অনেকে শহিদ হন। পরিণতিতে ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান সংসদ বাংলাকে ‘রাষ্ট্রভাষা’ হিসাবে স্বীকার করে নেয়। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি কার্যকর হতে লেগেছিল আরও দু’বছর। মাতৃভাষা নিয়ে এই আন্দোলনেই বীজ বপন হয়েছিল ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতেও নানা প্রান্তে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে অমর একুশের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিদেশে বাংলাদেশ মিশন ও বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানও এই দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে।