মাননীয়া অর্থমন্ত্রী প্রবীণদের কথাও একটু ভাবুন

চলতি অর্থবর্ষে ভারতে অর্থনীতির সংকোচনের পূর্বাভাস দিয়েছে একের পর এক মূল্যায়ন ও আর্থিক সংস্থা। কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে গত দু-মাস ধরে দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন। এই অবস্থায় দেশের অর্থনীতি রীতিমতো ধসে পড়ছে। শুক্রবার কেন্দ্রের হিসাব বলছে, জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার কমে ৩.১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। যা থেকে আঁচ করা যাচ্ছে, লকডাউন পরবর্তী দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও শোচনীয় হতে চলেছে। মন্দার ইঙ্গিত ছিল উপদেষ্টা সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাক্সের রিপোর্টে। উদ্বেগ বাড়িয়ে রেটিং সংস্থা ক্রিসিলের বার্তা, ভারতের ইতিহাসে সব থেকে ভয়ঙ্কর মন্দা সম্ভবত এ বছরেই দেখতে হতে পারে। স্টেট ব্যাংকের গবেষণা শাখা ইকোর‌্যাপের রিপোর্ট অনুসারে লকডাউনের জেরে দেশের অর্থনীতির বহর চলতি অর্থবর্ষে শূন্যের ৬.৮% নীচে নামবে। রয়টার্সের সমীক্ষাও বলছে, জানুয়ারি-মার্চের বৃদ্ধির হার ২০১২ সালের পরে সব চেয়ে খারাপ। ক্রিসিলের মতে, ২৮ এপ্রিল তারা যে চলতি অর্থবর্ষে ১.৮% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল, তার পরে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। তাই পূর্বাভাসে জিডিপি বৃদ্ধির হার এ বার শূন্যের ৫% নীচে নামিয়েছে তারা। সেইসঙ্গে তারা বলেছে, অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) জিডিপি সরাসরি কমবে ২৫%। আসতে চলেছে ঘোর আর্থিক মন্দা।

এর মধ্যে রুজি-রুটির সংস্থান আপাতত বন্ধ। লকডাউন উঠে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ফের কর্মস্থলে ফিরলেও পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজ পাবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই। ফলে অসংগঠিত ক্ষেত্রে পরিস্থিতি যে কতটা ভয়ানক হতে চলেছে, তার আঁচ করা যাচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ঢল দেখেই। একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাবে গত এক মাসেই কাজ হারিয়েছেন ১২ কোটিরও বেশি মানুষ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সংখ্যাটা যে আরও বাড়বে, তা এখনই আঁচ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গরিব, নিম্নবিত্তদের কর্মসংস্থানে জোর দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার আরও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে এনডিএ। প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ বলে বরাবরই মোদীর বিরুদ্ধে সরব বিরোধীরা। তবুও যতটুকুও চেষ্টা করেছিল মোদী সরকার, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও তা রুখতে লকডাউনের জেরে গত তিন মাসে সেই চেষ্টা পুরোপুরি জলে গিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইতিমধ্যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে ‘আত্মনির্ভর’ হতে বলেছেন। সে জন্য দেশের অর্থমন্ত্রী পর্যায়ক্রমে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। সেইমতো আত্মনির্ভরতা বাড়াতে দেশের খেটেখাওয়া মানুষ যাঁদের হাতে নগদ টাকায় টান পড়েছে, তাঁরা কতটা ব্যাংকমুখী হয়ে ঋণের ফাঁসে জড়িয়ে পড়বেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সুযোগসন্ধানী উদ্যোগপতিরা ব্যাংকের অনুৎপাদক সম্পদ বাড়িয়ে দেবেন, এই আশংকাও অমূলক নয়। তবে চলতি পরিস্থিতিতে শুধু পরিযায়ী শ্রমিকরাই নন, বিপাকে পড়েছেন প্রবীণ নাগরিকরাও। বিশেষ করে যাঁদের সুদের ওপর সংসার চলে তাঁদের। কারণ, ব্যাংক আমানতের ওপর সুদের হার প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।  বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন নিয়ে বহুজাতিক পরামর্শদাতা সংস্থা ‘আইপিই গ্লোবাল’ মানছে, ভাইরাসের চেয়েও বেশি মানুষের মৃত্যু হবে অভাবে। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অশ্বজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘বহু বছর ধরে দারিদ্র দূরীকরণে ভারত সরকারের সমস্ত প্রচেষ্টা মাত্র কয়েক মাসেই বিফল করে দিয়েছে।’’ ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা ছেড়ে আপাতত অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কাজ ফেরানো কেন্দ্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই কি দেশের অর্থমন্ত্রী প্রবীণদের নিয়ে ভাবিত নন? মাননীয়া অর্থমন্ত্রীর কাছে তাঁদের আর্তি–প্রবীণদের কথাও একটু ভাবুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here