ডিজিটাল ডেস্ক, ১ ফেব্রুয়ারি : পরের বছরই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এই নিয়ে পঞ্চমবার অর্থমন্ত্রী হিসাবে সংসদে বাজেট পড়ে শোনালেন নির্মলা। তিনি এ দিন দাবি করেন, ‘‘দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ৭ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে। পিছিয়ে পড়া মানুষের কথা ভেবে এই বাজেট পেশ হল। আমাদের দৃষ্টি অর্থনৈতিক সংস্কারের দিকে।’’ তিনি জানান, হস্তশিল্পের জন্য নয়া প্রকল্প আনা হচ্ছে। এই শিল্পসামগ্রীর বিক্রির ব্যবস্থা করবে সরকার। এর ফলে উপকৃত হবেন অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষরা। কৃষকরা যে সমস্ত সমস্যার মুখোমুখি হন, তার জন্য খরচ করা হবে। কৃষক, শিল্প সংস্থা এবং সরকারের মধ্যে মেলবন্ধন থাকবে। অর্থমন্ত্রীর কথায়–এই বাজেট হল ‘সপ্তর্ষি’। তা হল–অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, শেষ মাইল অবধি পৌঁছনো, ইনফ্রা এবং বিনিয়োগ, সম্ভাবনা তৈরি, সবুজ বৃদ্ধি, তারুণ্যের শক্তি এবং আর্থিক খাত।
বাজেটে অর্থমন্ত্রী জানান, ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় হলে আয়করে ছাড়, বাজেটে বড় ঘোষণা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের। এতে মধ্যবিত্ত স্বস্তি পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘নতুন কর নীতির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন যারা পুরোনো নীতিতে কর দিতে চান, তারা তা জারি রাখতে পারেন। ’’ তিনি জানান, সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে সর্বোচ্চ ডিপোজিট সীমা ১৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হচ্ছে। ৪৭ লাখ যুবক-যুবতীকে স্টাইপেন্ড দেওয়া হবে। আগামী ৩ বছরের জন্য জাতীয় প্রকল্প চালু করা হবে। মহিলা সম্মান সেভিংস সার্টিফিকেট চালুর ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। ২০২৫ সাল মার্চ পর্যন্ত সুযোগ মিলবে এই স্কিমে বিনিয়োগ করার। ২ লাখ পর্যন্ত টাকা জমা দেওয়া যাবে এতে। সুদের হার ৭.৫ শতাংশ। দেশজুড়ে তৈরি করা হবে ১৫৭টি নতুন নার্সিং কলেজ। শিশুশিক্ষায় জোর দিয়ে তৈরি হবে ডিজিটাল লাইব্রেরি। ওষুধ উৎপাদনে গবেষণায় জোর দেওয়া হবে। ৬৩ হাজার প্রাথমিক কৃষি ক্রেডিট সোসাইটিকে কম্পিউটারাইজ়ড করা হবে। তৈরি হবে ডেটাবেস। এতে কৃষকরা উৎপাদনের সঠিক দাম পাবেন। নজর রাখবে সরকার। সেইসঙ্গে বিমার আওতায় আনা হল ৪৪ কোটি ৬০ লক্ষ ভারতীয়কে।রেলের জন্য বরাদ্দ ২ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা। পরিবহণ পরিকাঠামোয় বরাদ্দ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। জিডিপির মোট ৩.৩ শতাংশ পরিমাণ লগ্নি করা হবে মূলধনী খাতে। ’’
এ বারের বাজেটে পশুপালন এবং মৎস্যচাষে ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করল কেন্দ্র। নির্মলার কথায়, ‘‘সাতটি বিশেষ লক্ষ্য এই বাজেটের। তাই এই বাজেটকে ‘সপ্তর্ষি’ হিসাবে দেখছি আমরা।’’ বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ডিজিট্যাল পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রে যাবতীয় পরিচয়পত্রের প্যান কার্ডই মূল। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বরাদ্দ বৃদ্ধি বেড়ে হল ৭৯ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি ২.৪ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ হল রেলের জন্য। জানালেন নির্মলা সীতারামন। তিনি জানান, আগামী ৩ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে ৩৮ হাজার ৩৮০ শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। কর্নাটকে সেচ ব্যবস্থার উন্নতিতে ৫,৩০০ কোটি টাকার কেন্দ্রীয় সাহায্য। এ ছাড়াও রাজ্যগুলিকে ৫০ বছরের জন্য বিনা সুদে ঋণ আরও এক বছরের জন্য। অর্থমন্ত্রী দাবি করেন, কোভিড অতিমারির পরবর্তী সময়কালে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বেড়েছে দেশে। জোরদারভাবে পর্যটনের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তা নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে, যাতে আরও পর্যটক আসেন। এই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে বলে জানান নির্মলা।