ডিজিটাল ডেস্ক, ১৩ জুলাই : দেশের জাতীয় প্রতীকে ‘শ্বদন্ত’ পশুরাজের মুখ নিয়ে আপত্তি তুলেছে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে দেশের জাতীয় প্রতীক ‘অশোক স্তম্ভে’র অবমাননার অভিযোগে সরগরম জাতীয় রাজনীতি। কারণ, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নয়া সংসদভবনের ছাদে যে অশোক স্তম্ভের উদ্বোধন করেছেন, সেখানে সিংহগুলির রূপ বদলে গিয়েছে। বিরোধীদের দাবি, সারনাথের মন্দিরের যে অশোক স্তম্ভকে ভারতের জাতীয় প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল, তার সিংহটি অনেক সৌম্য এবং শান্ত স্বভাবের। সেই রূপ বদলে তাদের শ্বদন্ত কেন দেখানো হল? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ড্যামেজ কন্ট্রোলে মাঠে নামল কেন্দ্র। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় আবাসনমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরীর দাবি, ‘‘এই সিংহগুলি সারনাথের অশোক স্তম্ভের অবিকল অবয়ব, শুধু আকারটা বড়। যদি সারনাথের অশোক স্তম্ভকে উঁচু করা হয় বা নয়া সংসদভবনের মূর্তির সাইজ ছোট করা হয়, তাহলে কোনও পার্থক্য থাকবে না।’’ সেইসঙ্গে তিনি বলেন, “মূর্তির আকার এবং উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও বদল হয়নি। সৌন্দর্য কে কী ভাবে দেখবে তাঁর উপর নির্ভর করছে। তবে শান্ত, না রাগী সিংহ বিতর্কে বলতে চাই, আসল সারনাথের প্রতীক ১.৬ মিটার লম্বা ছিল। সেটা নয়া সংসদভবনের মূর্তির ক্ষেত্রে ৬.৫ মিটার করা হয়েছে। এটাই যা পার্থক্য। যদি আসল মূর্তির আকারে নতুনটি তৈরি করা হত, তাহলে দূর থেকে তা দেখা যেত না। বোদ্ধাদের এটাও জানা উচিত, সারনাথের স্তম্ভগুলি মাটিতে স্থাপিত ছিল, আর নয়া স্তম্ভ মাটি থেকে ৩৩ মিটার উঁচুতে রয়েছে। দু’টিকে পাশাপাশি রেখে তুলনা করা উচিত। তা হলে সিংহরা শান্ত, না রাগী, তা ভাল বোঝা যাবে।”
বিরোধীদের দাবি, জাতীয় প্রতীকের অবয়ব পালটে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ ছুড়ে তাদের দাবি, জাতীয় প্রতীক নিয়ে ছেলেখেলা করে সংবিধান অবমাননা করা হয়েছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের দাবি, ‘‘সারনাথের অশোক স্তম্ভের সিংহগুলির চরিত্র বদলে দেওয়া দেশের জাতীয় প্রতীকের অপমান।’’ বিরোধীদের আরও দাবি, ২০০৫ সালের জাতীয় প্রতীক আইন লঙ্ঘন করেছে কেন্দ্র। এই আইন অনুযায়ী, দেশের জাতীয় প্রতীকের নকশা বদলানো যায় না। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরি বলেছেন, “মোদীজি দয়া করে সিংহের মুখগুলি দেখুন। এগুলি কি সারনাথের সিংহ, নাকি গুজরাতের অরণ্যের সিংহ! ভাল করে দেখে সিংহের মুখ বদলে দিন।’’ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকারও সরকারকে আক্রমণ শানিয়ে টুইট করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমাদের জাতীয় প্রতীকের অপমান, অশোকের সিংহের অপমান! আসল সিংহরা শান্ত, আত্মবিশ্বাসী, ধৈর্যশীল। আর অন্যদিকে মোদীর সংস্করণ হল হিংস্র, গর্জনরত, অহেতুক আগ্রাসী এবং আকারও ভুল। লজ্জার বিষয়। দ্রুত এটা পালটানো হোক।” যদিও বিরোধীদের এই সমালোচনায় গুরুত্ব দেয়নি বিজেপি। তারা জানিয়েছে, বিরোধীরা কেন্দ্রের সমালোচনার একটি নতুন বিষয় খুঁজে পেয়েছে। এর বেশি কিছু নয়। অন্য দিকে, নতুন জাতীয় প্রতীকের শিল্পী সুনীল দেওরেও তাঁর সাফাইয়ে বলেছেন, তিনি কোনও উগ্র মনোভাব থেকে প্রভাবিত হয়ে ওই মূর্তি তৈরি করেননি। তিনি মূর্তিগুলি নিজের মতো করেই বানিয়েছেন। তবে তার আগে সারনাথের আসল অশোক স্তম্ভটি নিয়ে গবেষণাও করেছিলেন। যে দাবি-ই তিনি করুন, সেই গবেষণায় শিল্পী কতটা সফল, তা নিয়ে জল্পনায় ইতি টানবে কে, সেটাই এখন দেখার।