সিএএ জারি হবেই, দাবি অমিতের, মমতার কথায়, ‘তোতাপাখির বুলি’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমিত শাহ। ছবি–সংগৃহীত।

ডিজিটাল ডেস্ক, ৫ মে : একুশের বিধানসভা ভোটে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন সফল হয়নি। তাই বলে পিছু হটতে রাজি নন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বঙ্গ সফরে এসে বঙ্গবাসীদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘বিশ্বাস রাখুন, মোদীজির নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়ার কাজ জারি থাকবে।’’ পাশাপাশি শিলিগুড়ির জনসভা থেকে অমিত শাহ বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের কাছে পরিষ্কার করে দিতে চাই, তৃণমূল সিএএ-র বিরোধিতা করছে। সেই কারণে তারা এর সম্বন্ধে মিথ্যে তথ্য ছড়াচ্ছে। ওরা বলছে, সিএএ নাকি কোনওদিন বাস্তবের মাটিতে জারি হবে না। কিন্তু আমি আজ পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, করোনার দাপট কমলেই আমরা সিএএ জারি করব এবং আমাদের ভাইদের নাগরিকত্ব দেব। মমতা দিদি, আপনি তো এটাই চান, যে অনুপ্রবেশ জারি থাকুক, এবং বাংলাদেশ থেকে যে শরণার্থীরা এসেছেন, তাঁরা নাগরিকত্ব না পান। তৃণমূলের লোকেরা কান খুলে শুনে নিন, সিএএ বাস্তব ছিল, আছে এবং থাকবে। মমতা দিদি, আপনি কিছুই করতে পারবেন না।’’

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সংসদের উভয়ক্ষে পাস হয়েছে। তারপর রাষ্ট্রপতি সাক্ষরের পর সেই বিল আইনে পরিণত হয়। কিন্তু বছর আড়াই কাটলেও সিএএ আইনের নীতি এখনও সম্পূর্ণভাবে প্রণয়ন হয়নি। সংসদ বেশ কয়েকবার সিএএ আইনের নীতি প্রণয়নের সময়সীমা বাড়িয়েছে। এজন্য কোর্টে করোনাকেই দায়ী করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। তবে, সিএএ লাগু না হওয়ায় অসন্তুষ্ট বাংলার মতুয়া, নমশ্রুদ্র অধ্যুষিত এলাকার একাধিক বিজেপি সাংসদ, বিধায়করা। এই প্রেক্ষাপটে বাংলায় এসে ফের সিএএ প্রসঙ্গ তুললেন শাহ। আশ্বস্ত করলেন সিএএ কার্যকর হবেই। একুশের বিধানসভা ভোটের পর প্রথম বঙ্গে এলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু আগেই রাজ্যে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে তাঁর দরবারে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের রিপোর্ট জমা পড়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির দলীয় সভায় শাহর মুখে উঠে এল বাংলার ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস প্রসঙ্গে। যা নিয়ে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত পদ্মবাহিনীর লড়াইয়ের হুঁশিয়ারি দেন অমিত শাহ। এ দিন শিলিগুড়ির দলীয় জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজ্যের মানুষ ভোট দিয়ে তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনেছে। কিন্তু, তিনবার ক্ষমতা পেয়েও শোধরাননি মমতাদি। আমরা এক বছর সময় দিয়েছিলাম। কাজ হয়নি। ভাববেন না যে, বিজেপি এর বিরুদ্ধে লড়বে না। সিন্ডিকেটরাজ, হিংসা বন্ধ না হলে বিজেপি শেষ পর্যন্ত লড়াই চালাবে।’’

অন্যদিকে, এ দিন তৃণমূল সরকারের তৃতীয়বার ক্ষমতায় পর প্রথম বর্ষপূর্তিতে রাজ্যবাসীকে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি বলেন, “আমাদের প্রতি যেন মা-মাটি-মানুষের ভরসা অটুট থাকে। আমরা তাঁদের ভরসা করি। ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। যদি কোনও ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে আমরা ভুল করে থাকি, কারও খারাপ লাগলে, আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।” এদিন মমতা আরও বলেন, “বাংলা উন্নয়নের পথে। মানুষের সঙ্গে থেকেই আমাদের কাজ করতে হবে। যে মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না, কেন পাচ্ছেন না, তার কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিতে হবে। পঞ্চায়েত স্তরে আরও বেশি কাজ করতে হবে। পুরসভায় আরও কাজ করতে হবে।” এ দিন সিএএ নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘রোজকার মিথ্যে কথা বলাটা অপরাধ। আর মালিকের নির্দেশে একই কথা বারবার, তোতা পাখির বুলি। এটা মিথ্যাচারের ভ্রষ্টাচার। উনি যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন, সেটা কাদের ভোটে? নাগরিক না হলে তারা ভোট দিল কী করে?’’ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে শাহের সমালোচনার পালটা মমতা বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেসকে নিয়ে ওনাকে ভাবতে হবে না। উনি দিল্লি দেখুন। উনি উত্তর প্রদেশ দেখুন। মধ্যপ্রদেশে সাংবাদিকদের সঙ্গে কী হচ্ছে দেখুন। জাহাঙ্গিরপুরীতে কী হয়েছে, সেটা দেখা উচিত। বাংলা ওনাদের কাছে নেই। তাই বাংলাকে নিয়ে এত নোংরা কথা বলা উচিত নয়।’’

এ দিন ‘শাহি মঞ্চ’ থেকে বাংলা ভাগের দাবিতে সরব হন মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মন। তিনি বলেন, ‘‘এত বঞ্চনা, এত শোষণ, সে জন্য জনগণের মঞ্চ থেকে উত্তরবঙ্গ আলাদা করার দাবি এসেছে। উত্তরবঙ্গের জন্যও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই কিছু ভাবছেন।’’ এর পাশাপাশি, শাহের বঙ্গ সফরের দিন ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়ও একই দাবি তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের মানুষ বঞ্চিত। উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা ব্যবস্থা হোক। উত্তরবঙ্গের মানুষ উত্তরবঙ্গ শাসন করুক।’’ উল্লেখ্য এর আগে উত্তরবঙ্গ ভাগের সুর শোনা গিয়েছিল সাংসদ জন বার্লা, সাংসদ রাজু বিস্তা, বিধায়ক শংকর ঘোষ ও বিধায়ক বিষ্ণু প্রসাদ শর্মার গলাতেও। আর উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য ঘোষণা প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি সিপিএমের বি টিম। সিপিএম বিজেপির লিংকম্যান। এদের কাজই সব কিছু টুকরো করা। ওরা মনও টুকরো করে দিতে পারে। এরা হিন্দুর সঙ্গে মুসলিমের ডিভোর্স করাতে চায়। বাঙালির সঙ্গে রাজবংশীর ডিভোর্স করাতে চায়। বাঙালির সঙ্গে বাঙালির ডিভোর্স করাতে চায়। দেশের জন্য কী করেছেন উনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে ইডি সিবিআই বাদ দিয়ে কোনও কাজ করেছেন উনি? ইদের দিনটাও ছাড়েনি। সেদিনও দাঙ্গা করিয়েছে।’’ অমিত শাহের ভাষণে রাজ্যে ৩৫৫ ধারা লাগুর ইঙ্গিত নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতার মন্তব্য, ‘‘তার মানে উনি এগুলো হতে দেবেন? তার মানে উনিই ষড়যন্ত্রকারী? বেড়াল ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়েছে। এটা কোনও দিন হবে না। আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু বিএসএফকে রাজ্যের ওপর কথা বলতে নির্দেশ দেবেন না। আপনাদের দায়িত্ব গরু পাচার রোখা, অনুপ্রবেশ রোখা। আপনার দায়িত্ব এই এলাকায় শান্তি রক্ষা করা। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বুলডোজার চালানো আপনার কাজ নয়। তাই এটা করবেন না। আগুন নিয়ে খেলবেন না। গণতান্ত্রিকভাবে মানুষ তার জবাব দেবে।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here