ডিজিটাল ডেস্ক, ১০ মার্চ : একুশের বিধানসভা ভোটে ব্যাপক জয় পেয়ে ২০২৪-এ দেশ থেকে বিজেপিকে উৎখাতের লক্ষ্য নিয়ে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার ভোটের প্রচারে ঝাঁপায় তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথমবার লড়েই দাগ কাটতে সক্ষম ঘাসফুল শিবির। কিন্তু তাঁদের চিন্তা বাড়াচ্ছে জোটসঙ্গী মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি। তৃণমূলের হাত ছেড়ে সম্ভবত বিজেপির হাত ধরে সরকার গড়তে চলেছে সৈকত রাজ্যের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দলটি। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টে পর্যন্ত ফলাফলের ট্রেন্ডে ৪০ আসনের গোয়া বিধানসভায় ২০টি আসন পাচ্ছে বিজেপি। কংগ্রেস পাচ্ছে ১১টি আসন। তৃণমূলের জোটসঙ্গী মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি পাচ্ছে ২টি আসন। ৩টি আসন জিতেছেন নির্দল প্রার্থীরা। ১টি করে আসন জিতেছে গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টি এবং রেভনিউশনারি গোয়ানস পার্টি। তাই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বিরোধীদের মুখ মমতা না কেজরিওয়াল? পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফলাফল নিয়ে এমন প্রশ্ন করেই বসেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে অত্যন্ত খারাপ ফল করেছে কংগ্রেস। এ নিয়ে কলকতা পুরনিগমের মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম মন্তব্য করেছেন,‘‘কংগ্রেসটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে শেষ হয়ে গিয়েছে। আমরাও ছিলাম ওই দলে। বুঝতে পারছি না কেন একটা এত পুরনো একটা দল বিলুপ্তির পথে। কংগ্রেসের উচিত তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে যাওয়া। তাহলে গান্ধীবাদ এবং সুভাষবাদকে নিয়ে আমরা জাতীয়স্তরে গডসেবাদের বিরুদ্ধে লড়তে পারব।’’ এমন ফলপ্রাপ্তির দিনকে ‘ঐতিহাসিক দিন’ বলে দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দলের এমন জয় নিয়ে বলতে গিয়ে বৃহস্পতিবার থেকেই দেশে হোলি উৎসব শুরু হবে বলেও মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর। তাঁর দাবি, বিজেপি-র ‘নীতি ও নির্ণয়ের জয় হয়েছে’।
বৃহস্পতিবার বেলা ১টা অবধি প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে যোগী আদিত্যনাথের দল। অখিলেশ যাদবের দল আপাতত দ্বিতীয় স্থানে থেকে ১১৬টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে কংগ্রেস ও মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি। উত্তর প্রদেশে আপনা দল (এস) এগিয়ে রয়েছে ৯টি আসনে। রাষ্ট্রীয় লোক দল এগিয়ে ৯টি আসনে, জনসত্তা দল লোকতান্ত্রিক এগিয়ে ২টি আসনে। উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেসকে বহু পিছনে রেখে এগিয়েই চলেছে বিজেপি। ৭০ বিধানসভা আসনের উত্তরাখণ্ডে ৪৬টিতে এগিয়ে আছে বিজেপি। দেবভূমি ফের বিজেপির দখলে যেতে চলছে। কংগ্রেস এগিয়ে ২১টিতে এবং বহুজন সমাজ পার্টি এগিয়ে রয়েছে ১টি আসনে। মণিপুর বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পথে বিজেপি। ছয় রাউন্ড গণনা শেষে প্রাপ্ত খবর, ৬০ আসনের বিধানসভায় ৩০টি কেন্দ্রে এগিয়ে চলেছে গেরুয়া বাহিনী। পঞ্জাবে এ বার ‘আম আদমি পার্টির সরকার’, দিল্লির বাইরে কোনও রাজ্যে এই প্রথম এত বড় সাফল্য পেল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল। ঘোষণা মতোই পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন ভগবন্ত মান। পঞ্জাবে পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়ল কংগ্রেস। প্রত্যাশা মতো ফল করতে পারেনি বিজেপি। ১১৭ আসন বিশিষ্ট পঞ্জাব বিধানসভার ৯১টি আসনে এগিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি, বিজেপি ২টি আসনে, নির্দল ১টি আসনে, কংগ্রেস ১৭টি আসনে ও শিরোমণি অকালি দল ৬টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। ম্যাজিক সংখ্যা ৫৯ ছাড়িয়ে অনেক এগিয়ে গিয়েছে আপ। এ বার দিল্লির বাইরে প্রথম জয়ের গন্ধ পাচ্ছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বেলা বাড়তেই শুরু হয়েছে আপ-সেলিব্রেশন। আপের ‘মুখ্যমন্ত্রী মুখ’ ভগবন্ত মানের বাড়িতে শুরু হয় মিষ্টি বানানোর কাজ।
এ বার গোয়া নিয়ে আলাদা নজর ছিল রাজনৈতিক মহলের। প্রথম থেকেই কৌশলী ছিল বিজেপি। সাতজন বিধায়ককেও টিকিট দেয়নি বিজেপি। এই কৌশল কতটা কাজে দেবে তা নিয়েও জল্পনা চলছিল। এমনকী পানাজি আসনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পরিক্করের ছেলে উৎপলকেও টিকিট দেয়নি বিজেপি। তিনি নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু পানাজি আসনে হাজারেরও কম ভোটে আতানাসিও মোনসেরাত্তের কাছে পরাজিত হয়েছেন উৎপল। তবে অল্প ভোটের ব্যবধানে এই জয় নিয়ে বিজেপির একাংশের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিজেপির বিজয়ী প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘‘উৎপল যদি এত ভোট পেয়ে থাকেন, তার মানে ক্যাডারদের একাংশ তাঁকে সমর্থন করেছেন। তবে সর্বশেষ ফলাফল অনুসারে তৃণমূল একটি আসনও দখল করতে পারেনি গোয়ায়। আপ ২টি আসন পেয়েছে। রেভেলিউশনারি গোয়ান পার্টি পেয়েছে ১টি আসন।
আজ ফল প্রকাশ হতেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে পঞ্জাবে কংগ্রেস, শিরোমণি অকালি দলের হেভিওয়েটদের একে একে প্রত্যাখ্যান করেন পঞ্জাবের জনগণ। পূর্ণাঙ্গ ফল আসার আগেই দুপুরেই নিজেদের হার স্বীকার করে নেন নভজ্যোত সিং সিধু। পঞ্জাবের কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সিধু টুইট বার্তায় লেখেন, ‘‘মানুষের কণ্ঠস্বর ঈশ্বরের কণ্ঠ…। নম্রভাবে পঞ্জাবের জনগণের আদেশ মেনে নিচ্ছি…। আম আদমি পার্টিকে অভিনন্দন!’’ আর সর্বভারতীয় কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী টুইটে বলেছেন, ‘‘মানুষের এই রায় স্বচ্ছন্দে মেনে নিচ্ছি। শুভেচ্ছা রইল যাঁরা জনতার রায়ে জিতেছেন। কংগ্রেসের সমস্ত কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের অভিনন্দন জানাই কঠোর পরিশ্রম এবং একাগ্রতার জন্য। আমরা এই ফলাফল থেকে শিক্ষা নেব এবং ভারতের মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’’ ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন বড় পরীক্ষা ছিল বিজেপি-র কাছে। যোগী আদিত্যনাথ সরাসরি পরীক্ষায় বসলেও ফলের দিকে পরীক্ষার্থীর মতোই তাকিয়ে ছিলেন মোদী। এক অর্থে এই রাজ্য মোদীরও। কারণ, তিনি বারাণসীর সাংসদ। ২০২১ সালের দুর্গাপুজোর পর থেকেই উত্তরপ্রদেশে প্রচারে নেমে গিয়েছিলেন তিনি। যোগী যেমন অযোধ্যাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তেমনিই বারাণসীকে ভর করে গোটা উত্তরপ্রদেশের দিকে নজর রেখেছিলেন মোদী। সেই উত্তরপ্রদেশের জয় নিয়ে দিল্লিতে দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের বিজেপি দফতরে এসে মোদী এদিন বলেন, ‘‘এই রাজ্যের মানুষকে জাতিবাদ দিয়ে ভাগ করা হয়েছে এতকাল। বলা হয়েছে, জাতপাতের হিসেবে নির্বাচন হয় এখানে। এর মাধ্যমে সেই নাগরিকদের এবং গোটা উত্তরপ্রদেশের বদনাম করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের মানুষ পর পর নির্বাচনে দেখিয়ে দিলেন, উত্তরপ্রদেশের মানুষ উন্নয়নে ভরসা রেখেই ভোট দিয়েছেন। পর পর চারটি নির্বাচনে রাজ্যে মানুষ জবাব দিয়েছেন।’’