উত্তরবঙ্গে আক্রান্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, তির তৃণমূলের দিকে

কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। ছবি–সংগৃহীত

ডিজিটাল ডেস্ক, ২৫ ফেব্রুয়ারি: এমনটি যে ঘটবে, তা আগেই টের পেয়েছিল পুলিশ। কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পরিণতিতে শনিবার উত্তরবঙ্গের দিনহাটা এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আক্রান্ত হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। বিজেপির অভিযোগ, কালো পতাকাধারী তৃণমূলকর্মীরা পরিকল্পিত এই হামলা চালিয়েছে। তৃণমূলের তরফে এই এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হলেও আক্রান্ত মন্ত্রী জানান, যা ঘটেছে, তা তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি কোচবিহারে সভা করতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এক রাজবংশী যুবকের বিএসএফের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনায় অভিষেক আঙুল তোলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং তাঁর দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা ওই এলাকার সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের দিকে। সেইমতো তৃণমূল ওই রাজবংশী যুবকের মৃত্যুর প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নেয়। দলের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ হুইপ জারি করেন, বিএসএফের গুলিতে মৃতের পরিবার যত দিন বিচার না পাবেন, তত দিন নিশীথ সিতাই এবং দিনহাটার কোনও ব্লকে সভা করতে এলে তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হবে। একই সঙ্গে ওই এলাকাগুলিতে বিজেপি সভা বা কর্মসূচি করলে তৃণমূল বুথ সভাপতিকে অপসারণ করা হবে। কারণ, তাতে প্রমাণ হয় যে, ওই বুথ সভাপতি নিজের এলাকায় দলের সংগঠন মজবুত করতে পারেননি। এ হেন পরিস্থিতিতে দিনহাটার রাজনৈতিক উত্তাপ চড়তে থাকে। শনিবার পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দিনহাটার বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ বাড়াতে আসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু দিনহাটার বুড়িরহাট এলাকায় তাঁর কনভয় পৌঁছলে তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে কালো পতাকা দেখান। এ নিয়ে পুলিশের সামনেই বিজেপি কর্মী-সমর্থক এবং তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে বচসা থেকে হাতাহাতি থেকে বোমাবাজি হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কনভয়ের উপর ঢিল ছোড়া হয়। তাঁর গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষীরা নিশীথকে কোনওক্রমে সেখান থেকে সরিয়ে নেন। এ নিয়ে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বাংলা এখন দুষ্কৃতীদের রাজত্ব হয়ে গিয়েছে। যে ভাবে দুষ্কৃতীরা হামলা করছে, তা কখনও স্বাভাবিক রাজনীতির পরিবেশ হতে পারে না।’’ তাঁর কনভয়ে হামলা প্রসঙ্গে নিশীথ বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ দেখুন, কী চলছে। তবে লড়াই থেকে আমরা সরব না। পুলিশ নিষ্ক্রীয়। পুলিশ ও তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা একযোগে এই হামলা চালিয়েছে।’’ রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি।’’ আর তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘ওখানে রাজবংশী যুবককে ১৮০টি বুলেট দিয়ে মেরেছে বিএসএফ। সেই মন্ত্রকের মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। ফলে ওঁর বিরুদ্ধে ওই অঞ্চলের মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। তাই এই বিক্ষোভ।’’ এই চাপান-উতোরের মধ্যে ঘটনার দায়  কী পুলিশ এড়াতে পারে? কারণ, দিনহাটার রাজনৈতিক উত্তাপ যে চড়ছিল, তা পুলিশের অজানা ছিল না। তা হলে কেন পুলিশ আগাম ব্যবস্থা নেয়নি? তা নিয়ে রাজ্য পুলিশের এক কর্তার সাবধানী মন্তব্য, সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here